শহীদ মিনার গড়ে উঠেছিল
রাজনৈতিক প্রতিবাদের প্রতীক ও
হাতিয়ার হিসাবে। প্রতীক, কারণ
রাষ্ট্রীয় সহিংসতা নিপীড়ন
অত্যাচার
নির্যাতনের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের
জনগণের লড়াই
ভাষা আন্দোলনকে কেন্দ্র
করে একটা বিশেষ ঐতিহাসিক মুহূর্ত
হয়ে উঠেছিল; শহীদ মিনার সেই
মুহূর্তের প্রতীক। সমাজে যখনই ন্যায়সঙ্গত
লড়াইয়ের দাবি ওঠে, আমরা বার বার
শহীদ মিনারে গিয়ে দাঁড়াই।
ফলে লড়াইয়ের সেই বিশেষ
ঐতিহাসিক মুহূর্ত সার্বজনীন তাৎপর্য
লাভ করেছে।
অন্যদিকে, একটি জনগোষ্ঠীর
রাজনৈতিক পরিগঠন ও রাষ্ট্র
হয়ে ওঠার সঙ্গে যে ভাষার সম্পর্ক
অঙ্গাঙ্গী, ভাষা আন্দোলনের মধ্য
দিয়ে আমরা সেটাও শিখেছি।
অতএবএই মুহূর্তটিকে শুধু
ভাষা আন্দোলনের দিক
থেকে বিচার করলে চলবে না।
ঔপনিবেশিক ইতিহাসের
মধ্যে আরো অনেক প্রশ্নের উত্তর
খুঁজতে হবে। যেমন, কেন
খেটে খাওয়া কৃষক ও শ্রমিকের আশা-
আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের প্রশ্ন
মধ্যবিত্ত শিক্ষিত শ্রেণীর ভাষা ও
সংস্কৃতির দাবির সঙ্গে যুক্ত
হয়ে গিয়েছিল? ভাষা আন্দোলনে?
কী ঐতিহাসিক কারণ ছিল তার?
ইংরেজ ১৭৫৭ সালে এ দেশ দখল
করে নেবার পর ১৮৫৭ সালের
সিপাহী বিদ্রোহ অবধি এই দেশের
মানুষ—বিশেষত মুসলমান সমাজ
ইংরেজি শেখেনি। ততোদিনে হিন্দু
মধ্যবিত্ত শ্রেণী গড়ে উঠেছে।
বাংলাভাষী মুসলমান তখন
অধিকাংশই কৃষক, জোলা, কারিগর
ইত্যাদি। সমাজে নিগৃহীত। যখন
তারা শিক্ষার দিকে ঝুঁকল তখন অনেক
আশা বুকে বেঁধে পাট বেচে মরিচ
বেচে ধান
বিক্রি করে তারা তাদের সন্তানদের
স্কুল কলেজ
বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পাঠাতে শুরু
করল। তারা পাকিস্তান চেয়েছিল
দেশ ভাগ করবার জন্য নয়, জমিদার
মহাজনদের নির্যাতন থেকে রেহাই
পাবার জন্য। ঐতিহাসিক
বাস্তবতা ছিল এমন যে জমিদার ও
সুদখোরি মহাজনদের অধিকাংশই ছিল
হিন্দু। জমিদার-মহাজনদের
বিরুদ্ধে বাংলার কৃষকসহ নিপীড়িত
জনগণের স্বার্থের বিরোধ
সাতচল্লিশের দেশভাগের
একটি প্রধান কারণ। এই
দিকটি মনে না রাখলে আমরা যেমন
আমাদের নিজেদের বুঝতে ভুল করব,
তেমনি কেন বাংলার কৃষক ও
খেটে খাওয়া শ্রেণীগুলো মধ্যবিত্ত
শ্রেণীর ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষার
আন্দোলনে শামিল হোল তার কোন
ব্যাখ্যা পাওয়া যাবে না। অর্থাৎ
মধ্যবিত্ত শ্রেণীর ভাষা আন্দোলনের
পেছনে কেন কৃষক শ্রমিক
খেটে খাওয়া মানুষ ঐক্যবদ্ধ হোল তার
কোন কারণ খুঁজে পাওয়া যাবে না।
ধান বেচে পাট বেচে মরিচ
বিক্রি করে যে-ছেলেমেয়েদের
শিক্ষিত করে তুলবার জন্য
বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানো হয়েছিল
তাদের বুকে গুলি চালানো হয়েছে।
সেই গুলির রক্তের ছিটা ও ক্ষত কৃষকের
বুকে গিয়ে লেগেছে, জোলা,
কারিগর মেহনতি মানুষের
বুকে গিয়ে লেগেছে। পাঁজর ভেদ
করে চলে গিয়েছে। মধ্যবিত্ত শ্রেণীর
মত সংখ্যা-গরিষ্ঠ সাধারণ মানুষের
কাছে এই আন্দোলন নিছকই ভাষা ও
সংস্কৃতির অধিকার রক্ষার আন্দোলন
ছিল না। ঔপনিবেশিক ইংরেজ শক্তির
বিরুদ্ধে লড়াই করেছে জনগণ, কিন্তু
১৮৫৭ সালের সিপাহি বিদ্রোহ ব্যর্থ
হবার পর তারা বুঝতে পেরেছিল
তাদেরকেও ইংরেজি শিখতে হবে,
শিক্ষিত হতে হবে। ভবিষ্যতের আশায়
তারা তাদের সন্তানদের স্কুল, কলেজ
বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠাতে শুরু করল।
সেই ছাত্রদের যখন খুন করা হোল সেই
সময়ের পূর্ব পাকিস্তানে তখন আগুন
জ্বলে উঠল।
শুধু প্রতীক নয়, শহীদ মিনার ছিল একই
সঙ্গে রাজনৈতিক হাতিয়ার।
সেটা আমরা সহজে বুঝতে পারি যখন
কোন রাজনৈতিক আন্দোলনের
সূচনা ঘটে শহীদ মিনারকে আশ্রয়
করে আন্দোলনের
দাবিদাওয়া নিজের ন্যায্যতা প্রমাণ
করবার চেষ্টা করে। শহীদ মিনার সরগরম
হয়ে ওঠে। ঠিক যে শহীদ মিনার
শহুরে মধ্যবিত্ত শ্রেণীর দাবিদাওয়ার
পাটাতন হিসাবেই প্রধানত ব্যবহৃত
হয়ে এসেছে। শ্রমিক, কৃষক
খেটে খাওয়া মানুষের ক্ষেত্র
হয়ে উঠতে পারে নি। কিন্তু
রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসাবে শহীদ
মিনারের এই ভূমিকা ছিল অনন্য। শহীদ
মিনারের এই রাজনৈতিক তাৎপর্য
ক্ষুণ্ণ হয়েছে যখন এর অধঃপতন
ঘটেছে মধ্যবিত্ত শ্রেণীর সাংস্কৃতিক
মঞ্চে। এই সাংস্কৃতিকতা আবার
অধিকাংশ সময় ছিল দলীয়,
বাংলাদেশের বিভাজিত
রাজনৈতিক বাস্তবতার নগ্ন প্রদর্শন।
পতনের ধারাবাহিকতাই চলছিল
এতদিন। ফলে শহীদ মিনারের
বিরাজনীতিকরণ ঘটেছে দ্রুত।
রাজনৈতিক লড়াই সংগ্রামের প্রতীক
বা হাতিয়ার হয়ে থাকার অবক্ষয়
ঘটেছে মারাত্মকভাবে।
যখন একে তথাকথিত সেক্যুলার
মধ্যবিত্ত শ্রেণী মসজিদ বা মন্দিরের
বিকল্প হিসাবে ভাবতে ও গণ্য
করতে শুরু করেছে তখনএই পতন পচনের রূপ
ধরেছে। শহীদ মিনার
হয়ে উঠেছে 'পাকপবিত্র' স্থান, তার
আবার একটি মূলবেদীও আছে। ‘পবিত্র’,
‘বেদী’ ইত্যাদি ধর্মতাত্ত্বিক
চিহ্নে শহীদ মিনারকে ভূষিত করা হয়।
দারুণ ইন্টারেস্টিং!
এই পচন কতো গভীর রূপ
নিয়েছে সেটা মানবাধিকার সংগঠন
হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর
বাংলাদেশের দায়ের করা জনস্বার্থ
রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে শহীদ
মিনারের ‘মর্যাদা ও পবিত্রতা’
এবং ভাষা আন্দোলনের স্মৃতি রক্ষায়
২৫ আগস্ট ২০১০ তারিখে বুধবার
বিচারপতি মোঃ মমতাজ উদ্দিন আহমদ
ও বিচারপতি নাঈমা হায়দারের
বেঞ্চের দেয়া রায়ের মধ্য
দিয়ে ধরা পড়ে। রায়ে প্রতিষ্ঠিত
হোল শহীদ মিনারের তাৎপর্য
রাজনৈতিক তো নয়ই
এমনকি সাংস্কৃতিকও নয়; শহীদ
মিনারকে এখন আমাদের মন্দির
বা মসজিদের মত ‘পবিত্র’ গণ্য
করতে হবে। এটাও আমাদের
জানিয়ে দেওয়া হোল শহীদ
মিনারে মন্দিরের মতো একটি ‘মূল
বেদী’ (!) আছে। শহীদ মিনারের মূল
বেদীতে কোন সভা সমাবেশ
করা যাবে না। তবে ‘বেদীর
পাদদেশে’ সভা সমাবেশ করা যাবে।
শহীদ মিনারে ‘বেদী’
আছে এবং বেদীর পাদদেশও আছে।
বেশ। অথচ বাংলাদেশের কোন্ স্থান
'পাকপবিত্র' আর কোথায় 'বেদী'
স্থাপিত
হয়েছে বা আগামিতে হবে সেই
সিদ্ধান্ত নেবার এখতিয়ার
আদালতের নয়। বাংলাদেশের
সংবিধান আইন প্রণয়নের দায়িত্ব
বিচার বিভাগের ওপর ন্যস্ত করে নি।
শহীদ মিনারে সভা সমাবেশ
করা যাবে কি যাবে না সেই
বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবার এখতিয়ার
আদালতের নাই। এই এখতিয়ার জাতীয়
সংসদের। ‘আইনের দ্বারা আরোপিত
যুক্তিসঙ্গত বাধানিষেধ-সাপেক্ষে’
বাংলাদেশের সর্বত্র অবাধ
চলাফেরা করা ও শান্তিপূর্ণ ও নিরস্ত্র
অবস্থায় ‘সমবেত হইবার এবং জনসভা ও
শোভাযাত্রায় যোগদান করিবার
অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের
থাকিবে।’ (দেখুন
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের
সংবিধান, অনুচ্ছেদ ৩৬ ও ৩৭।)।
রায়ে আদালত নিজের এখতিয়ারের
বাইরে আরো নির্দেশ দিয়েছে।
যেমন, “বিশ্ববিদ্যালয় ও সকল
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার
নির্মাণ ও মর্যাদা রক্ষা করতে হবে।”
আরো আছে, ভাষা আন্দোলনের
শহীদদের মরণোত্তর পদক ও জীবিতদের
জাতীয় পদক দেয়ার নির্দেশ; জীবিত
ভাষা সৈনিকদের কেউ সরকারের
কাছে আর্থিক সাহায্য
চাইলে তা দেয়ার নির্দেশ। কেন্দ্রীয়
শহীদ মিনারের
পাশে একটি লাইব্রেরিসহ জাদুঘর
প্রতিষ্ঠা করার নির্দেশ;
সেখানে পর্যটকদের জন্য
ভাষা আন্দোলনের তথ্য সংক্রান্ত
পুস্তিকা রাখার নির্দেশ;
ভাষা সৈনিকদের প্রকৃত
তালিকা তৈরির জন্য
সরকারকে একটি কমিটি গঠন করার
নির্দেশ; এমনকি এ বিষয়ে ২০১২
সালের ৩১ জানুয়ারির মধ্যে গেজেট
প্রকাশ করার নির্দেশও দেয়া হয়।
অন্যান্য নির্দেশের
মধ্যে আছে ভাষা সৈনিকদের সব
রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ
জানানো এবং তাদের জন্য
সাধ্যমতো সরকারি সুবিধা নিশ্চিত
করা, ইত্যাদি।
এই সকল নির্দেশের মধ্যে রাষ্ট্রের
বিচার বিভাগ, জাতীয় সংসদ ও
নির্বাহী বিভাগ একাকার
হয়ে গিয়েছে। এই বিষয়গুলো কেন
জনস্বার্থের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সেই
দিকও স্পষ্ট নয়। বিচার বিভাগের
সীমা কোথায় শুরু আর কোথায় শেষ
আদালতের রায় দেখে আর বোঝার
উপায় নাই। জনগণের লড়াই ও
সংগ্রামের প্রতীক ও হাতিয়ার শহীদ
মিনারের এই দুর্দশা দেখে সত্যই
করুণা হয়।
রায়ে শহীদ মিনার এলাকায়
ভবঘুরেরা যেন
ঘোরাফেরা করতে না পারে বা ‘অস
ামাজিক কার্যকলাপ’
চালাতে না পারে সে জন্য তিন জন
নিরাপত্তা প্রহরী নিয়োগ দেওয়ার
জন্য তথ্য মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ
দেওয়া হয়েছে। মানুষের কী কার্য
সামাজিক আর কোনটাই
বা 'অসামাজিক' তার নৈতিক মানদণ্ড
ঠিক করে দেবার দায়িত্ব আদালতের
নয়। ‘অসামাজিকতা’-র
আইনী সংজ্ঞা কী? নৈতিক
পরিমণ্ডলের সীমা আইন করে নির্ধারণ
করা যায় না। শহীদ মিনারের
নির্বাহী ব্যবস্থাপনার সমস্যা রায়
দিয়ে সমাধানের চেষ্টাও বিস্ময়কর
বটে। শহীদ মিনারের দারোয়ানের
সমস্যাকেই আদালত আইন
করে নিষ্পত্তি করতে চাইছেন।
এতে আদালত কোথায়
নেমে আসে সেটা আমরা আদালতকে ব
িবেচনা করে দেখতে অনুরোধ করব।
ভবঘুরেরা বাংলাদেশের নাগরিক,
কিন্তু তাদের হাত থেকে শহীদ
মিনার রক্ষা করতে হবে, এই
যদি আদালতের রায় হয়
তাহলে আদালত নাগরিকদের অধিকার
রক্ষা করবে কীভাবে? ঠিক যে শহীদ
মিনার এমনভাবে ব্যবহার করা দরকার
যাতে তার রাজনৈতিক তাৎপর্য ক্ষুণ্ণ
না হয়। যদি রায়ের বাস্তবোচিত
মানে করি, তার মানে দাঁড়ায়
বাংলাদেশের অবহেলিত,
নির্যাতিত সাধারণ যেসব
সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ—যেসব
ঘরহারা গরিব মানুষ মাঝেমধ্যে শহীদ
মিনারে এসে বিশ্রাম নিত, যাদের
মাথার ওপর ছাদ নাই, কিচ্ছু নাই,
তাদের জন্য শহীদ মিনার নিষিদ্ধ
হোল। এই রায় গণমানুষের পক্ষে গেল
না। দুর্ভাগ্য আমাদের।
আসুন রায়ের প্রতি যথাযোগ্য সম্মান
প্রদর্শনপূর্বক আমরা শহীদ
মিনারকে একটি মসজিদ
অথবা মন্দিরে পরিণত করি।
বাংলাদেশে লড়াই-সংগ্রামের
ইতিহাস চুলায় যাক। কী এসে যায়
শহীদ মিনার আমাদের বেড়ে ওঠার
কোন প্রতীক বা হাতিয়ার কিনা। এই
যুগ মসজিদের যুগ, এই যুগ মন্দিরের যুগ। আসুন
আমরা আমাদের
গোপনে লুকিয়ে রাখা ধর্মান্ধ
অনুভূতিগুলোকে শহীদ মিনারে মনের
মাধুরি মিশিয়ে সাজাই। তারপর
প্রশংসা করি আমাদের
সেক্যুলারিজমের। আসুন পাকপবিত্র
স্থানগুলোকে আরো পাকপবিত্র
করে তুলি, বেদীগুলোকে আরো পূজার
ফুল দিয়ে সাজাই!!!
এই তো চাই!
Posted 1 hour ago by Kutubi Coxsbazar
Labels: অন্য দিগন্ত, আলোচনা, উপ-
সম্পাদকীয়, ফরহাদ মজহার, মতামত,
রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন
22
FEB আসুন শহীদ
মিনারকে একটি মসজিদ
অথবা মন্দিরে পরিণত করি!
by ফরহাদ মজহার
0 Add a comment
গত বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকায় নেমেই
পশ্চিমবঙ্গের
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
বললেন, ‘মনে হয় নিজের
দেশে এসেছি। দুই বাংলার সম্পর্ক
অনেক গভীর করতেই এই সফরে এসেছি।’
এর আগে কলকাতায়
তিনি বলেছিলেন, প্রাণের টানেই
ঢাকায় যাচ্ছেন।
বাংলাদেশের মানুষও
পশ্চিমবঙ্গে বা ত্রিপুরায় গেলে একই
অনভূতি প্রকাশ করেন।
তাঁরা সেখানে যান মনের টানে,
প্রাণের তাগিদে। সেখানকার
মানুষের সঙ্গে তাঁরাও আনন্দ ও
বেদনা সমানভাবে ভাগ
করে নিতে চান।
অনেকে পুরোনো স্মৃতি হাতড়ে বে
ড়ান। একই ভাষাভাষী মানুষ বলেই
টানটা বেশি। তবে এ-ও স্বীকার
করতে হবে যে অনেক সময় রাষ্ট্রিক ও
রাজনৈতিক বাধা আমাদের
সম্পর্ককে এগোতে দেয় না। পিছু
টানে।
সম্ভবত আমরা এ রকম একটি বাধার
মুখোমুখি হই ২০১১ সালের
সেপ্টেম্বরে, ভারতের তৎকালীন
প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের
ঢাকা সফরের সময়। সবকিছু ঠিকঠাক
ছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে তিস্তা নদীর
পানি বণ্টন
চুক্তিটি হলো না ভারতের
অভ্যন্তরীণ রাজনীতির
টানাপোড়েনের কারণে। অনেক
কাটাছেঁড়া করে যে সীমান্ত
প্রটোকল সই হলো,
তাতে কোনো পক্ষই সন্তুষ্ট
হতে পারেনি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
এই অজুহাতে মনমোহন সিংয়ের
সফরসঙ্গী হলেন
না যে তাঁকে না জানিয়েই
দিল্লি বাংলাদেশের
সঙ্গে তিস্তা চুক্তি চূড়ান্ত করেছে।
এর আগে ২০১০ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ
হাসিনার
দিল্লি সফরকালে প্রকাশিত যৌথ
ইশতেহারে অতীতের সন্দেহ-
অবিশ্বাস পেছনে ফেলে দ্বিপক্ষীয়
সম্পর্ক নতুন মাত্রায় নিয়ে যাওয়ার
ঘোষণা এসেছিল। এরপর শেখ
হাসিনার সরকার ভারতের
নিরাপত্তা ঝুঁকি কেবল কমাননি,
উলফা আস্তানাগুলো গুঁড়িয়ে দিয়ে,
নেতাদের বিতাড়িত
করে জানিয়ে দিয়েছিলেন,
বাংলাদেশের
মাটি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের জন্য নয়।
উল্লেখ্য, শেখ হাসিনার প্রথম
সরকারের আমলে গঙ্গার পানি বণ্টন
চুক্তি হলেও তাঁর সরকার ভারতের
নিরাপত্তা ঝুঁকি কমাতে পেরেছিল
বলে মনে করেন না ভারতীয়রা।
সে ক্ষেত্রে ২০১১ সাল দ্বিপক্ষীয়
সম্পর্কের মাইলফলক রচিত হতে পারত।
হয়নি। এ ব্যাপারে দিল্লির কতটা ভুল
ছিল, কতটা আমাদের কূটনৈতিক
ঘাটতি ছিল আর কতটা মমতার
অনাপসী মনোভাব কাজ করেছিল,
সেই বিতর্কে না গিয়েও বলা যায়, এই
প্রথম দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ভারতের
অভ্যন্তরীণ রাজনীতির
টানাপোড়েনের শিকার হলো।
আগে এসব নিয়ে বাংলাদেশের
রাজনীতিই দ্বিধাবিভক্ত ছিল।
২০১১ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০১৫
সালের ফেব্রুয়ারি—এই সাড়ে তিন
বছরে বাংলাদেশ অংশে তিস্তার
পানিপ্রবাহ প্রায় শূন্যে নেমে এলেও
ঢাকা, কলকাতা ও নয়াদিল্লির
রাজনীতির অঙ্গনে অনেক পরিবর্তন
এসেছে। ঢাকায় শেখ
হাসিনা তৃতীয়বার
প্রধামন্ত্রী হয়েছেন ৫ জানুয়ারির
‘বিতর্কিত’ নির্বাচনে।
দিল্লিতে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন
ইউপিকে হটিয়ে ক্ষমতায়
এসেছে নরেন্দ্র মোদির
নেতৃত্বাধীন বিজেপি। কংগ্রেসের
অবস্থান দুর্বল থাকায় লোকসভায়
সীমান্ত বিল তুলতে প্রচণ্ড
বিরোধিতার মুখে পড়ে।
বর্তমানে বিজেপির সেই সমস্যা নেই।
তারা চাইলেই বিলটি অনুমোদন
করিয়ে নিতে পারবে।
পশ্চিবঙ্গে বামফ্রন্টকে শোচনীয়ভাব
ে পরাজিত
করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষমতায়
এসেছেন। কিন্তু
যেভাবে তিনি বামফ্রন্টকে তুড়ি মের
ে উড়িয়ে দিয়েছিলেন,
বিজেপিকে সেটি পারছেন না।
বিগত
লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি পশ্চ
িমবঙ্গে কেবল দুটি আসনই
ছিনিয়ে নেয়নি,
পরবর্তী বিধানসভা নির্বাচনে সরকার
গঠনেরও স্বপ্ন দেখছে।
তারা তৃণমূলে ভাঙন ধরাতে সক্ষম
হয়েছে। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ
সম্পাদক মুকুল রায়সহ অনেকেই দল
ছেড়ে বিজেপিতে যোগদানের
প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে গণমাধ্যমে খবর
এসেছে। এর
পাশাপাশি সারদা কেলেঙ্কারি ও
বর্ধমান–কাণ্ড আপসহীন মমতাকে বেশ
বেকায়দায় ফেলেছে। এ অবস্থায়
কেন্দ্রের সঙ্গে ‘যুদ্ধ’
চালিয়ে যাওয়া বুদ্ধিমানের কাজ
হবে না বলেই মনে করছেন তৃণমূল
নেত্রী। এটাই তাঁর ঢাকায়
শুভেচ্ছা সফরের পটভূমি। একুশের
রাতে ভাষাশহীদদের
প্রতি শ্রদ্ধা জানানো উপলক্ষ মাত্র।
সম্প্রতি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র
মোদি বাংলাদেশের
প্রধানমন্ত্রী শেখ
হাসিনাকে টেলিফোন
করে বলেছেন, তিনি শিগগিরই সুখবর
নিয়ে বাংলাদেশে আসতে চান।
বাংলাদেশের মানুষ বরাবরই
আশাবাদী। তবে তাদের আশা ভঙ্গের
বেদনাও কম নয়। এর পরও
তারা পেছনে ফিরে তাকাতে চায়
না। সামনে এগোতে চায়। আর
সে ক্ষেত্রে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
দূতিয়ালির ভূমিকা নিতে পারতেন,
বাংলাদেশের
সমস্যাটি দিল্লিকে বোঝাতে পার
তেন। যেমনটি করেছিলেন
পশ্চিমবঙ্গের সাবেক
মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতিবসু।
তিনি ছাড়া গঙ্গা চুক্তি হতো না।
আর মমতার জন্য তিস্তা ও সীমান্ত
প্রটোকল
আটকে আছে বললে অত্যুক্তি হবে না।
বাংলাদেশের ব্যাপারে মমতা যেমন
আবেগময় অনুভূতি প্রকাশ করলেন, তাঁর
প্রতিও বাংলাদেশের মানুষের
আবেগের ভাগটি মোটেই কম নয়।
যেদিন তিনি মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত
হলেন, পশ্চিবঙ্গের মানুষের
সঙ্গে বাংলাদেশের মানুষও
খুশি হয়েছিল, আরেকজন
নারী রাজনীতিককে একটি দেশের
না হলেও রাজ্যের প্রধান পদে পেয়ে।
তারা ভেবেছিল, জ্যোতি বসুর
মতো তিনিও বাংলাদেশের
সমস্যাটি বুঝবেন। যেদিন
মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, সেদিনই
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর
পক্ষে জাতীয় সংসদের একজন সদস্য ফুল
দিয়ে তাঁকে অভিনন্দিত করেছিলেন।
এটি রাষ্ট্রীয় আচারের
চেয়ে বেশি কিছু।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিশ্চয়ই
স্বীকার করবেন, যন্ত্র দিয়ে পানির
পরিমাণ মাপা যায়, কিন্তু হৃদয়ের
উষ্ণতা মাপা যায় না। এ জন্য
আরেকটি উষ্ণ হৃদয় থাকা দরকার।
মুখ্যমন্ত্রী কিংবা তৃণমূল নেত্রী মমতার
কথা বলছি না, লেখক-কবি-চিত্রকর
মমতার সেই হৃদয় আছে বলেই
আমরা মনে করি। বহু বছর আগে এক
সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন,
যখন হিলি সীমান্তের কাছ
দিয়ে যাই, বাংলাদেশের
দিকে তাকিয়ে থাকি। দেখি, একই
রকম শস্যখেত, একই রকম সবুজ বনানী।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সেদিন
বলতে না পারলেও আজ বলছি, এই
শস্যক্ষেত ও সবুজ
বনানীকে বাঁচিয়ে রাখবে যে জলধা
রা, সেটি শুকিয়ে যাচ্ছে,
বাংলাদেশের মানুষ তিস্তার
পানি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
আরেকবার মমতা বলেছিলেন,
‘আমরা রাজনৈতিকভাবে বিভক্ত
হলেও একই ভাষায় কথা বলি।
সারা বিশ্বের
বাংলা ভাষাভাষী এক
থাকলে তার শক্তির কথাটি ভাবুন।’
এবার ঢাকায় নেমেও তিনি গানের
ভাষায় বললেন, ‘বিশ্বকবির সোনার
বাংলা, নজরুলের বাংলাদেশ,
জীবনানন্দের রূপসী বাংলা, রূপের
যে তার নেই কো শেষ।’
এই রূপময় বাংলাকে,
বাংলাদেশকে বাঁচিয়ে রাখতে যে
নদীর জলধারা সচল রাখা প্রয়োজন,
সে কথাটিও নিশ্চয়ই
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বীকার
করবেন। সীমান্তের দুই দিকেই
যে তিস্তা প্রবহমান, তার তীরে লাখ
লাখ মানুষের বাস, তাদের জীবন–
জীবিকার কথাটিও একবার
তিনি ভেবে দেখবেন। সীমান্তের
ওপারের মানুষের বেঁচে থাকার জন্য
যেমন জল প্রয়োজন, তেমনি এপারের
মানুষের জন্যও।
তিনি যদি রবীন্দ্রনাথের সোনার
বাংলা, নজরুলের বাংলাদেশ ও
জীবনানন্দের
রূপসী বাংলাকে বাঁচিয়ে রাখতে চ
ান, তাহলে তিস্তার
পানি বণ্টনে একটি চুক্তিতে কেন
সম্মতি দেবেন না?
আমরা এ–ও জানি যে তিস্তার
পানিপ্রবাহ কমে যাচ্ছে।
উজানে পানি সরানো হচ্ছে।
পানির ঘাটতি থাকলে দুই
পক্ষকে ভাগাভাগি করে নিতে হবে।
প্রয়োজনে পানির প্রবাহ
বাড়াতে যৌথ ও সমন্বিত প্রয়াস
চালাতে হবে। উজানে মজুতাগার
তৈরি করতে হবে। কিন্তু ভাটির দেশ
বলে বাংলাদেশকে বঞ্চিত
করা যাবে না।
আমরা শুনে অত্যন্ত আনন্দিত
যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সীমান্ত
চুক্তির বিষয়ে তাঁর অবস্থান পরিবর্তন
করেছেন। সীমান্ত
চুক্তি বাস্তবায়নের
বিষয়টি তিনি খোলাখুলি বলেছেন।
ছিটমহল বিনিময়ের পর শরণার্থীদের
পুনর্বাসনে প্রয়োজনীয় অর্থ দেওয়ার
জন্য কেন্দ্রের
কাছে দাবি জানিয়েছেন।
এটি অবশ্যই ইতিবাচক। তিস্তার
ব্যাপারেও
তিনি অনেকখানি নমনীয়। ঢাকায়
যাত্রা করার আগে তাঁর
সঙ্গে কথা বলেছেন ভারতের
পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। তাঁর কাছ
থেকে নিশ্চয়ই মোদি সরকারের
বার্তাটি পেয়েছেন। মমতা বলেছেন,
‘এটি ঐতিহাসিক সফর।’ বাংলাদেশ ও
ভারতের
মধ্যে সম্পর্কোন্নয়নে পশ্ছিমবঙ্গ
সেতুবন্ধ হতেও প্রস্তুত
আছে বলে তিনি জানিয়েছেন।
কিন্তু তিস্তার পানি বণ্টন
চুক্তি ছাড়া সেটি কী করে সম্ভব?
গতকাল সুধি সমাবেশে মমতা বলেছেন
তাঁর ওপর আস্থা রাখতে।
আমরা আস্থা হারাতে চাই না বলেই
তাঁর কাছ থেকে স্পষ্ট কথা চাই।
১৭ বছর পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
দ্বিতীয়বার ঢাকায় এসেছেন।
প্রথমবার যখন তিনি এসেছিলেন, তখন
তিনি লোকসভার একজন
সাংসদমাত্র। এবার পশ্চিমবঙ্গের
মুখ্যমন্ত্রী। নিকট
প্রতিবেশী হিসেবে তাঁর
কাছে বাংলাদেশের মানুষের
প্রত্যাশা অনেক। তঁারা মনে করেন,
দিল্লিকে কাছে টানতে কলকাতা ভূম
িকা রাখতে পারে।
বাস্তবে দেখা যাচ্ছে,
দিল্লি এগিয়ে এলেও
কলকাতা মনস্থির করতে পারছে না।
কেন এমনটি হবে? দিদি, আর কত দিন
আমরা বকেয়া সমস্যা নিয়ে ঝগড়াবিব
াদ করব? আসুন, বকেয়া সমস্যা দুটি যত
দ্রুত সম্ভব মিটিয়ে ফেলে ব্যবসা-
বাণিজ্য, সাহিত্য, শিল্প ও সংস্কৃতির
মেলবন্ধন রচনা করি। আপনার
সঙ্গে যাঁরা এসেছেন, তাঁরা কেবল
পশ্চিমবঙ্গের শিল্প, সাহিত্য ও
সংস্কৃতির উজ্জ্বল নক্ষত্র নন,
বাংলাদেশের মানুষেরও অত্যন্ত
প্রিয়জন। তাঁদের সাক্ষী রেখে বলছি,
অতীতের মতো ভবিষ্যতেও
বাংলাদেশ বন্ধুত্বের হাত
বাড়িয়ে দিতে দ্বিধা করবে না।
তবে আপনাদের কাছ থেকেও তার
প্রতত্তর আশা করি।
মমতার শুভেচ্ছা সফরটি কেবলই
শুভেচ্ছার ডালিতে সীমিত
না রেখে আরেকটু
বেশি হলে ক্ষতি কী?
সোহরাব হাসান: কবি, সাংবাদিক।
sohrab০3@dhaka.net
Posted 2 hours ago by Kutubi Coxsbazar
Labels: আলোচনা, উপ-সম্পাদকীয়,
পশ্চিমবঙ্গ, প্রথম আলো, ভারত, মতামত,
সোহরাব হাসান
22
FEB শুভেচ্ছা সফরটি আরেকটু
বেশি হলে ক্ষতি কী? by
সোহরাব হাসান
0 Add a comment
পেট্রলবোমার সহযাত্রী
সাবধানেই যাচ্ছি। দেশশুদ্ধ সবাই
সাবধান। বাসযাত্রীরা আরও
বেশি সাবধান।
গোটা বাসে একটি জানালাও
খোলা নেই।
খোলা জানালা মানেই
পেট্রলবোমার আতঙ্ক। তাই সবাই
জানালা এঁটে টাইট হয়ে বসে আছে।
যাচ্ছি ‘খুনের শহর’ নরসিংদী। খুনের
শহরের রাস্তায়ও তো ভয়ের আবহ
থাকার কথা। উঠে গিয়ে কন্ডাক্টরের
সঙ্গে গল্প জুড়ে দিই: ‘এই
পথে গাড়ি পুড়েছে কোনো?’
আল আমিন নামের তরুণটি বলে,
‘পুড়ছে না আবার? অবরোধের পর্-থন
তো পুড়ছে কয়েকটা।’
এই বাস যায় ভৈরবে।
বোমা হামলা সব ওদিকেই ঘটেছে।
জিজ্ঞেস করি, ‘এই এক মাসে কিছু
ঘটছে?’
‘আমাগো কোম্পানিরই বাস
পুড়ছে তিনটা।’
হঠাৎ চোখ চলে গেল বাসের নামের
দিকে: চলনবিল এক্সপ্রেস। এই রাস্তায়ই
এ কোম্পানির এ ধরনের বাস পুড়েছে,
মানুষ পুড়েছে। এক চিলতে ভয়
উঁকি দিল; তবে কি বাসশুদ্ধ আমরাও
সম্ভাব্য নাশকতার দিকে ছুটে চলেছি?
চালকের সামনের
কাচে লেখা অভয়বাণী:
‘আল্লা ভরসা’!
ছেলেটিকে বললাম, ‘ভয় করে না?’
‘ভয় করলে তো প্যাট ভরব না।’
মহাখালী থেকে টঙ্গী হয়ে গাজীপুর
পেরোচ্ছি তখন।
সড়কে কি লোকালয়ে উপেক্ষিত
হরতালে বেরিয়েছে মানুষ। জীবন
থমকায়, কিন্তু থেমে থাকে না।
গোপন নেতার খামারে
তাঁর নামে ১৭টি মামলা। তাঁর
সামনে পাঁচটি মুঠোফোন। দুই দিন
পরপর নম্বর বদলান। যেভাবে গ্রামের
খামারবাড়িতে গোপনে বৈঠক
করছেন, ষাটের দশকে সেভাবে কাজ
করতেন বামপন্থী নেতারা।
তিনি বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির
শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক এবং দলের
নরসিংদী শাখার সভাপতি। তাঁর
স্ত্রীও ঘরছাড়া।
তিনি জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের
সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা—
গুলশানের িবএনপি কার্যালয়ে খালে
দা জিয়ার সহচরী। আর ইনি একসময়ের
ডাকসাইটে ছাত্রনেতা ডাকসুর
সাবেক জিএস খায়রুল কবির খোকন।
শুনছিলাম তাঁর ‘হাইডিং অ্যান্ড
ফাইটিং’-এর গল্প। কেমন সেটা? দু-এক
দিন পরপর শহরের ভেতরের
কোনো রাস্তায় চার-পাঁচ শ লোক
নিয়ে মিছিল করেন—
মতান্তরে সংখ্যাটা দেড় থেকে দুই শ।
একেক দিন একেক জায়গায় ঘুমান।
কর্মীরা গোপন নেটওয়ার্কে খবর
পান।
পুলিশ বা আওয়ামী লীগের লোকজন
বাধা দেয় না?
‘আমরা তো নিষিদ্ধ দল না।
তবে ঝটিকা মিছিল করি,
জমায়েতের মধ্যে হাজির হয়ে আবার
গা-ঢাকা দিই।
সহিংসতা তো করছি না। আমি ৩
জানুয়ারি থেকে ঘরছাড়া। আমার
স্ত্রী দেশনেত্রীর সাথে অবরুদ্ধ।’
সুনাম বলি আর দুর্নাম বলি, নরসিংদীর
মানুষ মারাত্মক আত্মমর্যাদাবান।
সামান্য অপমান
থেকে খুনোখুনি হয়ে যেতে পারে।
ব্যবসা নিয়ে, প্রেম-পিরিতি নিয়ে,
জমিজমা নিয়ে নিত্য খুন-খারাবি হয়।
অথচ গত বছরের ৫ জানুয়ারি থেকে এ
বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত
নরসিংদীতে কোনো রাজনৈতিক
সহিংসতা হয়নি। জেলার
মধ্যে যে বাসটি পুড়েছে, সেটিও অন্য
জেলার, আহত ব্যক্তিরাও অন্য জেলার
এবং ধৃত বোমাবাজও অন্যখানের।
খোকন বলছিলেন, ‘পরশুদিনও হিরু
ভাইয়ের বাড়ির এলাকায় মিছিল
করেছি। কেউ বাধা দেয় নাই।
এখানে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের
সাথেও ব্যক্তিগত সম্পর্ক আছে।’
পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী লে. কর্নেল
(অব.) নজরুল ইসলাম িহরু (বীর প্রতীক)
নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের
সভাপতি। বিএনপির কেন্দ্রীয়
নেতা খোকন তাঁকে সম্মান
দিয়ে বললেন, ‘হিরু সাহেব
প্রতিহিংসাপরায়ণ মানুষ না।
আমাদের একে অপরের
প্রতি শ্রদ্ধাবোধ আছে। তবে দুই
জাতীয় নেত্রীর মধ্যে এমন সম্পর্ক
না থাকা দুঃখজনক। এর খেসারত
দিচ্ছে সমগ্র দেশ।
এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময়
মনে হতো আমরা একই দল করি।’
তাহলে কেন এমন হলো?
‘ক্ষমতার মোহ, বিরোধীদের
নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার
মানসিকতা ঢুকে গেছে সরকারি দলের
মধ্যে। তারা চাইছে জঙ্গি সংগঠন
প্রমাণ করে বিএনপিকে ধ্বংস করতে।
পার্বত্য চট্টগ্রামের শান্তি বাহিনীর
সাথে যদি সমঝোতা করতে পারে,
বিডিআর বিদ্রোহীদের
সাথে যদি সমঝোতা করতে পারে,
সাতই মার্চের পরেও যদি শেখ মুজিব
পাকিস্তানিদের
সাথে বসতে পারেন,
তাহলে আমাদের
সাথে বসতে অসুবিধা কোথায়?’
তাঁরা তো বলছেন,
আপনারা নাশকতাকারী, তাই
আলোচনার সুযোগ নেই।
‘সমঝোতা হলে এক দিনেই এসব
থেমে যেত। দুই দলের কোন্দলের
সুযোগ নিচ্ছে “তৃতীয় শক্তি”।
তারা দুই দলকেই খাদের
কিনারে ঠেলে নিয়ে যাচ্ছে। কেউই
জনগণের কথা ভাবছি না। নিরীহ জনগণ
ক্রসফায়ার হচ্ছে, অগ্নিদগ্ধ হচ্ছে,
ব্যবসা–বাণিজ্য বন্ধ।’
আপনারা ক্রসফায়ারের বিরুদ্ধে যত
সোচ্চার, পেট্রলবোমার
বিরুদ্ধে তো তত স্পষ্ট ভাষায় বলছেন
না!
‘জি, পেট্রলবোমারুদের
বিরুদ্ধে বিএনপির আরও সুনির্দিষ্ট
কর্মসূচি থাকা দরকার। কিন্তু আমাদের
তো ম্যাডামের সাথে দেখাই
করতে দিচ্ছে না, রাস্তায়
আসতে দিচ্ছে না।
তবে পেট্রলবোমা ও জামায়াত
বিষয়ে স্পষ্ট সিদ্ধান্ত আমিও চাই।
মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে যুদ্ধাপরাধীদ
ের বিচারের আমি শতভাগ সমর্থক।
আমরা দাবি জানিয়েছি যাতে বিচ
ার স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ হয়;
প্রতিপক্ষকে দমনের রাজনৈতিক
হাতিয়ার করা না হয়। এটুকু
বলা যাবে না? আমি শেখ
মুজিবকে হেয় করা সমর্থন যেমন
করি না, তেমনি শহীদ জিয়ার অপমানও
মানব না।’
চলে আসার আগে জানতে চাই,
আন্দোলনে জয়ের
আশা কতটা করছেন, িকসের
ভিত্তিতে করছেন।
‘যেহেতু দেড় মাস প্রতিরোধ
জারি রেখেছি এবং যেহেতু মানুষ
সরকারের গোঁ পছন্দ করেনি, সেহেতু
আমরা আশাবাদী।
সরকারকে বুঝতে হবে,
রশি বেশি টানলে ছিঁড়ে যাবে।
তৃতীয় শক্তি চলে আসবে।
আমি অগণতান্ত্রিকভাবে কারও
ক্ষমতা দখল চাই না। চাই না বলেই
তো অগণতান্ত্রিক
উপায়ে ক্ষমতা আঁকড়ে রাখার
বিরুদ্ধে আন্দোলন করছি।
ইতিমধ্যে রাজনীতি রাজনীতিবিদদ
ের হাতের বাইরে চলে গেছে।’
আত্মবিশ্বাসী স্বর কিন্তু
চোখেমুখে অনিশ্চয়তা নিয়ে তিনি
সাদা গাড়িতে করে চললেন অন্য
কোনো আস্তানায়। আমি চললাম
কর্মচঞ্চল শহরের দিকে।
ওরা বিলীন হয়ে যাবে
‘না, কোনো অবস্থাতেই
মীমাংসা হবে না।
তারা স্বাধীনতাবিরোধী, তাদের
সাথে আপস না।’ দীর্ঘদিনের পোড়
খাওয়া রাজনীতিবিদ। ‘হাইব্রিড’
নেতাদের িভড়ে তাঁকে আলাদা কর
ে চেনা যাবে।
তিনি নরসিংদী আওয়ামী লীগের
সাধারণ সম্পাদক আবদুল মতিন ভূঁইয়া।
শহরের টিনপট্টিতে তাঁর
গদিঘরে কথা হয়। চোখে ছানির
অপারেশন বিধায় কালো চশমা পরায়
তঁাকে রহস্যময় লাগছিল। কথার
পেছনে যুক্তি জোগাতে বললেন,
‘তাদের জঙ্গিবাদী দল
তো আগে বলা হয় নাই। ২০১৪ সালের
৫ জানুয়ারির পর তাদের
কার্যকলাপের জন্য বলা হইছে। জনগণও
তাদের বিরুদ্ধে কথা বলতেছে।’
আপনারাও তো ধরপাকড়–নির্যাতন
করছেন, ক্রসফায়ার চলছেই। তাদের
রাস্তায় নামতে দিচ্ছেন না।
‘যখন পরিস্থিতি ধৈর্যের
বাইরে চলে যায়, তখন অনেক
ক্ষেত্রে অনেক কিছুই হয়—করতে হয়।
তারা অস্থিতিশীল
করে তুলতেছে দেশ।
যারা গণতন্ত্রে বিশ্বাসী,
তারা চাইবে না অস্থিতিশীলতা হে
াক।’
সংলাপে অসুবিধা কী? দেশের
তো ক্ষতি হচ্ছে, তাই না?
‘সংলাপের পথ তো উনিই বন্ধ
করেছেন। একবার প্রধানমন্ত্রীর
টেলিফোনের জবাবে রাগ
দেখালেন, আরেকবার দরজা খুললেন
না। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে আসলেন
না!’
শহরের দেয়ালে খুন-ডাকাতির
বিরুদ্ধে পোস্টার।
দেয়ালে বিএনপি-আওয়ামী লীগের
পোস্টারের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান।
আগুনে মরুভূমিতে এই শান্তির
মরূদ্যানের রহস্য জানতে চাইলাম।
‘এটা নরসিংদীর ঐতিহ্য এবং এই
ঐতিহ্য বজায় থাকবে। তাদের
হরতালে আমরাও একসময় দোকান বন্ধ
রাখছি। আমাদের হরতালে তারাও বন্ধ
রাখছে। আমাদের কোন্দল নিজ দলের
মধ্যে, প্রতিপক্ষের
সাথে আমরা মারামারি করি না (মন
ে পড়ল মেয়র লোকমান হত্যার কথা)।
রাজনীতি তো এখানে আত্মীয়স্বজন
ের মধ্যেই হয়। দুই দলের নেতাদের
পরিবারের মধ্যে বিয়েশাদিও চলে।’
রাজনৈতিক প্রজ্ঞার পরিচয়
দিয়ে আবদুল মতিন ভূঁইয়া আরও বললেন,
‘ব্যবসা করে খাই,
রাজনীতিকে প্রতিহিংসায় নিই
না। বিএনপির নেতারাও নেন নাই।
ঢাকার রাজনীতি থেকে আমাদের
রাজনীতি আলাদা। রাজনীতি যত
মফস্বলে যাবে, তত ধীর হতে থাকবে।
বিএনপি এখানে ঘোষণা দিয়ে সভা
করুক না, সমস্যা হবে না। উনি পাঁচ-ছয়
মিনিটের জন্য আন্দোলনে নামেন
যাতে পরে, মনোনয়নের সুবিধা হয়।’
বললাম, বেগম জিয়াকে আপনার কেমন
মনে হয়?
কালো চশমা এবার সোজা আমার
দিকে, বললেন ‘বেগম জিয়ার
হিংসা-বিদ্বেষের পেছনে তাদের
নেতাদের ভূমিকা থাকতে পারে।’
চোখ ঢাকা বলে চোখের
ভাষা আর পড়া হলো না।
জিজ্ঞাসা করি, ‘৬৫ বছরের
গণতান্ত্রিক ঐতিহ্যবাহী দলের
সরকারে যদি ১৫৪ জন সাংসদই
বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন,
সেটা কি আপনাকে সুখী করে?’
‘বুঝেন না? প্রতিযোগিতাহীন
অবস্থায় ক্ষমতায় কিছু ঘাটতি থাকেই।’
তুমি কার লাশ?
আবার বাসের জন্য
দাঁড়িয়েছি মহাসড়কের ধারে। রাত
সাড়ে আটটা বাজে। এক পুলিশ হাতের
ইশারায় ডাকল। আমিও ইশারায়
ডাকলাম। পরে দুজনই
আপসে কিছুটা এগিয়ে মুখোমুখি হই।
সওয়াল-জবাবের পর জানতে চাই,
‘কেমন চলছে ডিউটি?’
বললেন, ‘কিছু বলার নাই,
চেহারা দেখে বুঝে নেন।’ তরুণ
ছেলেটির শুকনা মুখ আর মনমরা ভাব
দেখে মায়াই লাগল। এমন
মানুষেরা কীভাবে করে ক্রসফায়ার-
এনকাউন্টার?
দিনের চেয়ে রাতের বাস খুবই কম।
অনেকক্ষণ অপেক্ষার পর একটি বাস
পাওয়া গেল। দরজায় প্রহরী নিয়ে বন্ধ
জানালার বাসটি অন্ধকারে ছুটতে শুরু
করল। গন্তব্য যাত্রাবাড়ী; যেখানে এ
রকমই রাতে এ রকমই নিম্নবিত্ত
যাত্রীদের ২৪ জন দগ্ধ হয়েছিলেন,
মারা গিয়েছিলেন একজন।
সহযাত্রীদের মুখগুলোতে চোখ
বোলালাম, আজ যদি কিছু ঘটে,
তাহলে কে মরবে কে বাঁচবে? হঠাৎ
দরদে মনটা ভরে গেল। বিপদের
দিনে পাশের লোকটিই জনগণ, আর
জনগণের তো কেবল জনগণই আছে।
ফারুক ওয়াসিফ : সাংবাদিক ও লেখক।
bagharu@gmail.com
Posted 3 hours ago by Kutubi Coxsbazar
Labels: আলোচনা, উপ-সম্পাদকীয়, প্রথম
আলো, ফারুক ওয়াসিফ, মতামত,
রাজনীতি, হরতাল-অবরোধ
22
FEB কে নায়ক কে ভিলেন:
কে তুমি কার লাশ? by ফারুক
ওয়াসিফ
0 Add a comment
আজকের লেখাটি শুরু করার আগে ঘড়ির
দিকে তাকিয়ে দেখলাম রাত প্রায়
১১টা বেজে গেছে। ২০১৫ সালের ১০
ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ নিয়ে হৃদয়ের
মধ্যে যে বেদনা অনুভব করছি তা আমার
জীবনে কোনো দিন
কোনোকালে ঘটেনি।
আমি সাধারণত দিনের বেলায়
লিখি। অফিসে বসে কাজের
ফাঁকে হুটহাট করে নিজের
হাতে লিখি। আরও অনেক ব্যস্ত কলাম
লেখকের মতো আমি ডিকটেশন
দিতে পারি না। আবার কম্পিউটারের
কিবোর্ড ব্যবহার করেও
লিখতে পারি না। কাগজ ও কলম
ছাড়া যেন আমার চলেই না। আমার
বন্ধুবান্ধব যারা মূলত বড় বড় করপোরেট
ব্যবসায়ী কিংবা উচ্চপদস্থ আমলা-
তারা আমার
লেখালেখি নিয়ে প্রায়ই বিস্ময়
প্রকাশ করে। কারণ
ব্যবসায়ী হিসেবে আমার
ব্যস্ততা তাদের চেয়ে কম হওয়ার
কথা নয়- যেখানে ব্যবসা-বাণিজ্য,
রাজনীতি, সভা-সমিতি, সেমিনার,
দেশ-বিদেশ ভ্রমণ, ধর্ম-কর্ম
এবং সাংসারিক কর্ম সম্পাদনের পর
দৈনিক গড়ে প্রায় পনেরশ' শব্দ লেখার
ঝক্কি-ঝামেলার হিসাব
তারা মেলাতে পারে না। এতদিন
ধরে আমার নিজেরও প্রশ্ন ছিল। আজ
আমার লেখাগুলো হুটহাট করে বের হয়
কীভাবে! উত্তর বের করতে পারিনি,
তবে ৫ জানুয়ারি, ২০১৫ সালের
অব্যাহত অবরোধের কারণে আমার সেই
প্রশ্নের উত্তর আমি পেয়ে গেছি।
আমার নিত্যদিনকার কর্মে ছিল অফুরন্ত
শান্তি, স্থিতি এবং দুই
চোখজুড়ে ছিল রাজ্যের সব স্বপ্ন।
ফলে চিন্তার জগতে নিমজ্জিত
হয়ে ঝটপট কোনো কিছু
লিখে ফেলা কোনো ব্যাপারই ছিল
না। কিন্তু ইদানীংকালে আমি আর
পারছি না। চারদিকের সীমাহীন
অশান্তি, নৈরাজ্য, সন্ত্রাস, মানুষের
নির্মম অকাল মৃত্যু এবং পাষাণ-
পাষাণীদের রণহুঙ্কার আমার
চিন্তাচেতনাকে বিনষ্ট করে দিচ্ছে।
আমার সাজানো-গোছানো ব্যবসা-
বাণিজ্য, পরিপাটি অর্থনৈতিক
সঙ্গতি এবং মানসিক শান্তি যেন
হাসপাতালগুলোর বার্ন ইউনিটের
লোকজনের আহাজারির
সঙ্গে একাকার হয়ে গেছে। তাই
আগের মতো অফিসে বসে কাজের
ফাঁকে লিখতে পারি না।
দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে কেবল
আমি নই- দেশের সব আমজনতা তাদের
দৈনন্দিন
কর্মস্পৃহা হারিয়ে ফেলেছে।
যারা দেশকে নিয়ে চিন্তাভাবনা ক
রেন তারা স্পষ্টতই বুঝতে পারছেন
যে সর্বগ্রাসী বিপদ
পুরো জাতিকে অক্টোপাসের
মতো অাঁকড়ে ধরে আছে।
আদতে সেগুলো ছিল ছোট ছোট সমস্যা।
ঘটনা পরিক্রমায়
তা হয়ে পড়েছে হিমালয়সম উঁচু।
দেশের অর্থনীতি, সামাজিক বন্ধন,
পারস্পরিক সম্পর্ক, স্থিতিশীলতার
দেয়াল
পুরোপুরি ভেঙে পড়তে বসেছে। আজ
যারা ক্ষমতায় আছেন
কিংবা আগামীতে যারা ক্ষমতায়
আসার স্বপ্ন দেখছেন
তারা যদি এখনো সজ্জন এবং সচেতন
না হন তাহলে এই জাতির
ইতিহাসে খুব শিগগিরই একটি ভয়াবহ
দুর্ভিক্ষ এবং সিভিল ওয়ার
বা গৃহযুদ্ধের কলঙ্ক যুক্ত হবে তা প্রায়
নিশ্চিত করেই বলা যায়।
সরকারের যেসব লোক উঁচু গলায়
উন্নয়নের কথা বলছেন
তারা কি জানেন আমাদের দেশের
অর্থনীতির সার্বিক অবস্থা কেমন?
দেশের সব বীমা, ব্যাংক,
লিজিং কোম্পানিসহ আর্থিক
প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব মূলধন সাকুল্যে ২৫
হাজার কোটি টাকার বেশি হবে না।
এসব প্রতিষ্ঠানে দেশের জনগণ
এবং সরকারের মোট
স্থায়ী আমানতের পরিমাণ মাত্র এক
লাখ কোটি টাকার মতো।
অস্থায়ী আমানত
এবং চলতি হিসাবে লেনদেনকৃত
অর্থের পরিমাণ সর্বোচ্চ দুই লাখ
কোটি টাকার মতো।
ব্যাংকগুলো এযাবৎকালে সর্বোচ্চ
পাঁচ লাখ কোটি টাকার মতো ঋণ
বিতরণ করেছে। দেশের সব
পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকৃত অর্থের
পরিমাণ মাত্র তিন লাখ
কোটি টাকা। আমাদের অর্থনীতির
অর্থবাজারের এই
যে ব্যাপ্তি তা ভারতের
যে কোনো বড়মানের একটি প্রাইভেট
কোম্পানির চেয়েও কম।
এবার সরকারের আয়-রোজগারের
দিকে একটু তাকানো যাক।
বর্তমানে দেশের ৮৫% অর্থাৎ জাতীয়
বাজেটের ৮৫% আসে বিভিন্ন শুল্ক
এবং ভূমিকর, স্ট্যাম্প প্রভৃতি থেকে। এর
মধ্যে সিংহভাগ অর্থাৎ প্রায় ৯৫ ভাগ
অর্থ আসে আমদানি শুল্ক, ভ্যাট
এবং আয়কর থেকে।
বর্তমানে প্রতি মাসে প্রায় ১৪
হাজার কোটি টাকার আমদানি শুল্ক
আদায়ের টার্গেট রয়েছে। কিন্তু গত
তিন মাসে টার্গেট পূর্ণ হয়নি। হরতাল-
অবরোধের কারণে জানুয়ারি,
ফেব্রুয়ারি এবং মার্চ মাসে অর্ধেক
টার্গেটও পূর্ণ হবে না। অর্থাৎ গত তিন
মাস এবং আগামী তিন মাস
মিলিয়ে কেবল আমদানি খাতেই
রাজস্ব ক্ষতির পরিমাণ হবে ৪০ হাজার
কোটি টাকা। আমদানির ওপর নির্ভর
করে অগ্রিম আয়কর এবং ভ্যাট। এই
খাতে কম আদায়ের সম্ভাবনা প্রায়
হাজার কোটি টাকা।
তাহলে দেখা যাচ্ছে মার্চ মাস
পর্যন্ত সরকারের
আয়ে ঘাটতি দেখা দেবে ৫০ হাজার
কোটি টাকা।
এবার সরকারের ব্যয়ের
খাতটি নিয়ে একটু আলোচনা করি।
হরতাল-অবরোধের জন্য কেবল
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর
পেছনে মার্চ অবধি অতিরিক্ত খরচ
করতে হবে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা।
বিআরটিসি, রেলওয়ের ক্ষয়ক্ষতিও ৫০০
কোটি টাকার কম হবে না। বিদ্যুৎ,
জ্বালানি, সরকারি মালিকানাধীন
শিল্পকারখানায়
ভর্তুকি এবং লোকসানের পরিমাণ
হবে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা।
অর্থাৎ প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকার
অতিরিক্ত দেনা এবং ৫০ হাজার
কোটি টাকার লোকসান
গুনে এগুতে হবে বর্তমান বা ভবিষ্যৎ
সরকারকে যদি বর্তমান
সমস্যা ইনশাল্লাহ মার্চের
মধ্যে নিষ্পত্তি হয়ে যায়।
সরকারি খাতের কম আয়
এবং অতিরিক্ত ব্যয় মিলিয়ে বাজেট
ঘাটতি মোকাবিলা করতে হবে ৬০
হাজার কোটি টাকা।
অন্যদিকে বেসরকারি খাতে দেশবাস
ীর লোকসান হচ্ছে প্রতিদিন আড়াই
হাজার কোটি টাকা। মার্চ মাস পর্যন্ত
এই ক্ষতির পরিমাণ হবে দুই লাখ পনের
হাজার কোটি টাকা। এই বিশাল
ক্ষতির দায় বহন করার ক্ষমতা আমাদের
সরকারের যেমন নেই,
তেমনি বেসরকারি খাতেরও নেই।
দেশের ব্যবসায়ীরা রাস্তায়
নামছেন। সরকারের
কথামতো হরতালের
মধ্যে অনেকে মার্কেট খোলা রাখার
চেষ্টা করছেন; কিন্তু ক্রেতা নেই।
উল্টো দোকানগুলো খোলা রাখার
জন্য দৈনিক অতিরিক্ত
হারে কর্মচারীদের
মজুরি গুনতে হচ্ছে। আখেরে ফলাফল
উল্টো লাভ না হয়ে ক্ষতি হচ্ছে।
আগামীদিনে হরতাল-অবরোধের
মধ্যে সরকারের জন্য সবচেয়ে ভয়াবহ
বিপদ হিসেবে উপস্থিত হবে শ্রমিক
বিদ্রোহ। আমাদের দেশের
সবচেয়ে শ্রমঘন শিল্প হলো গার্মেন্ট
ফ্যাক্টরি। প্রায় ৪০ লাখ লোক
সরাসরি এই সেক্টরে কর্মরত যার ৯৫%-ই
হলো শ্রমিক। শুধু বাংলাদেশই নয়,
সারা দুনিয়াতে গার্মেন্ট হলো দিন
এনে দিন খাওয়ার
মতো শিল্পপ্রতিষ্ঠান। এদের
পুঁজি বলতে বিল্ডিং এবং সেলাই
মেশিনসহ অন্যান্য ভৌতিক
কাঠামো। এদের চলতি মূলধন
হলো ব্যাক টু ব্যাক এলসির
বিপরীতে পিসি বা সিসি লোন।
ক্ষেত্রবিশেষের এঙ্পোর্ট ডকুমেন্টের
বিপরীতে ব্যাংক ঋণ। নিজস্ব
সঞ্চয়ী হিসেবে আগামী তিন
মাসের বেতন-বোনাস সংরক্ষিত
রয়েছে এমন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের
সংখ্যা বাংলাদেশে ৫০টিও
আছে কিনা সন্দেহ।
প্রত্যেকটি গার্মেন্টশিল্পকে মাস
শেষে বেতনের জন্য
ব্যাংকে গিয়ে ধরনা দিতে হয়।
ফেব্রুয়ারি মাসের বেতন
কোনোমতে দিতে পারলেও মার্চ
মাসে গিয়ে বেশির ভাগ
শিল্পপ্রতিষ্ঠান বিপদে পড়বে। তাদের
নগদ সহায়তা দেওয়ার মতো সুযোগ
এবং সামর্থ্য ব্যাংক,
বীমা বা সরকারের নেই।
ফলে শ্রমিকরা রাস্তায় নেমে আসবে।
শুরু হবে নতুন সামাজিক বিপর্যয়।
দেশের
আবাসনশিল্পে মন্দা যাচ্ছে সেই ২০১৩
সাল থেকেই। ২০১৪ সালে এসে এই
মন্দা ভয়াবহ আকার ধারণ করে।
বর্তমানে এই সেক্টরে লোকজন
যে কী অবস্থায় দিনাতিপাত করছেন
তা কেবল ভুক্তভোগীরাই
বলতে পারবে। গার্মেন্ট-আবাসন
ছাড়াও দেশের উদীয়মান অন্যসব
উৎপাদনমুখী শিল্পপ্রতিষ্ঠান
এবং সেবা খাতও বর্তমান অরাজকতার
কারণে মারাত্দক বিপর্যয়ের
মুখে পড়েছে।
সবচেয়ে বিপদে পড়েছে প্রান্তিক
চাষি এবং দিনমজুরের
মতো খেটে খাওয়া মানুষ। দেশের
সার্বিক কৃষি ব্যবস্থায় হরতাল-
অবরোধের কারণে একদিকে যেমন
চলতি মৌসুমের উৎপাদিত কৃষিপণ্য
সংরক্ষণ, বিক্রয় ও বিপণনে সীমাহীন
লোকসান
গুনতে হচ্ছে তেমনি আগামী মৌসুমে
র
চাষাবাদে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়ত
া যা কিনা আমাদেরকে বিরাট
এবং ব্যাপক শস্য ঘাটতির
দিকে নিয়ে যাচ্ছে। এই
ঘাটতি শেষাবধি ডেকে আনতে পার
ে ভয়াবহ এক দুর্ভিক্ষের।
বর্তমান বিশ্বে কোনো দেশ
দুর্ভিক্ষকবলিত হয়ে চরম বিপর্যয়ের
মুখোমুখি হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম কেবল
বাংলাদেশ ছাড়া। আর আমরা সেই
বিপদে পড়ব কেবল আমাদের
খাদ্যাভ্যাসের জন্য। আমরা পৃথিবীর
একমাত্র জাতি যারা কিনা তাদের
খাবারের ৯০ ভাগ চাহিদাপূর্ণ
করি ভাত দ্বারা। বাকি ১০ ভাগ
অন্যান্য তরিতরকারী এবং পানীয়
দ্বারা। বাংলাদেশিদের জন্য
প্রয়োজনীয় খাদ্য অর্থাৎ চাল
এককভাবে সরবরাহ করতে পারে এমন
কোনো দেশ দুনিয়ায় নেই। বিশ্বের
চাল উৎপাদনকারী দেশের
সংখ্যা এবং উৎপাদনের পরিমাণ
কমছে। এ অবস্থায় টাকা থাকলেও
আমরা আমাদের প্রয়োজনীয় চাল
আমদানি করতে পারব না। ওই অবস্থায়
যদি কেউ আলু খাবার পরামর্শ দেয়
তবে তার টাকু
মাথা ফাটিয়ে আলুভর্তা বানিয়ে জন
গণ ক্রোধের আগুনের
জ্বালা মেটাবে।
ভবিষ্যৎ দুর্ভিক্ষের জন্য সবচেয়ে ভয়াবহ
বিপর্যয়
ডেকে নিয়ে আসবে ডায়রিয়া নামক
মরণব্যাধিটি। এমনিতেই আমাদের পেট
সারা বছর খারাপ থাকে। ফলে পেট
থেকে উৎপন্ন হয় কোটি কোটি টন
বিষাক্ত গ্যাস এবং লাখো কোটি টন
ততধিক বিষাক্ত বর্জ্য। স্বাভাবিক
অবস্থায় আমাদের
প্রকৃতি অলৌকিকভাবে আত্দীভূত
করে নেয়। কিন্তু বিশাল জনসংখ্যার
মাত্র ১০ ভাগ লোক যদি ডায়রিয়ায়
আক্রান্ত হয় তাহলে প্রকৃতির
শুষে নেওয়ার সেই আত্দীভূত
ক্ষমতা লোপ পাবে। আমাদের অতীত
দুর্ভিক্ষের তুলনায় ভবিষ্যৎ দুর্ভিক্ষ
কমপক্ষে এক হাজার গুণ
বেশি ভোগাবে ডায়রিয়া নামক
রোগটির দ্বারা আর এটি হবে ভয়াবহ
পরিবেশ দূষণ, অধিক জনসংখ্যা,
পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার
অপ্রতুলতা এবং সুপেয় পানির অভাবে।
আর সেই দিন সেই বিপর্যয়ের দুর্গন্ধময়
আক্রমণ থেকে বাংলাদেশের
কোনো ভবনই রক্ষা পাবে না।
দেশের চলমান হরতাল-অবরোধের
হাজারো নেতিবাচক পরিণতির
মধ্যে আমি কেবল অর্থনৈতিক
সেক্টরের কয়েকটির কথা বললাম। এর
বাইরে চুরি, ডাকাতি, হত্যা, ধর্ষণ,
লুটপাট, মিথ্যাচার, অনাচার, বিকৃত
মনমানসিকতা, পতিতাবৃত্তি, নেশা,
মারামারি,
কাটাকাটি ইত্যাদি বাড়তে থাকবে
জ্যামিতিকহারে। আর তখন আজকের
গণ্ডগোলের
উৎপাদনকারী প্রক্রিয়াজাতকারী,
মদদদানকারী,
বিপণনকারী এবং ভোক্তাদের
চাঁন্দের
দেশে পালাতে হবে অথবা জীবন্ত
দগ্ধ হয়ে মিশে যেতে হবে মাটির
সঙ্গে।
লেখক : কলামিস্ট।
Posted 3 hours ago by Kutubi Coxsbazar
Labels: আলোচনা, গোলাম মাওলা রনি,
বাংলাদেশ প্রতিদিন, মতামত,
রাজনীতি
22
FEB অশনি সংকেত! দুর্ভিক্ষ
অস্বাভাবিক নয়! by গোলাম
মাওলা রনি
0 Add a comment
‘২০১৪-১৫ অর্থবছরের জন্য
আমরা জিডিপি প্রবৃদ্ধির
ল্যমাত্রা স্থির করেছি ৭.৩ শতাংশ।
আমাদের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির
সম্ভাবনা নিয়ে আমি অনেক
বেশি আশাবাদী।
শক্তিশালী অভ্যন্তরীণ
চাহিদা আমাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধির
অন্যতম নিয়ামক। ২০১২-১৩
অর্থবছরে জিডিপির অংশ
হিসেবে অভ্যন্তরীণ ভোগ, বিনিয়োগ,
সরকারি ব্যয়, আমদানি ও রফতানির
প্রবৃদ্ধি ছিল যথাক্রমে ৫.১৬, -১.২৩,
১৭.১৩, ৩.৪৯ এবং ১.৩১ শতাংশ।
বেসরকারি বিনিয়োগের
প্রবৃদ্ধি ছিল ঋণাত্মক। তা সত্ত্বেও
জিডিপির প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৬.০৩
শতাংশ। ২০১৪-১৫ অর্থবছরের জন্য
অভ্যন্তরীণ ভোগ ব্যয়ের প্রবৃদ্ধি ৫.৫
শতাংশ, বিনিয়োগ প্রবৃদ্ধি ১০ শতাংশ
এবং সরকারি ব্যয় প্রবৃদ্ধি ১২ শতাংশ
অনুমান করা হয়েছে যা অনায়াসে ৭.৩
শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনে সহায়তা করবে।
’
গেল বছরের (২০১৪)
জুনে চলতি অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায়
দেশের অর্থনীতি নিয়ে এই অতি উচ্চ
আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলেন
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। কারণ
তখন সামষ্টিক অর্থনৈতিক
পরিস্থিতি ছিল ভালো। আর
রাজনৈতিক পরিস্থিতিও ছিল শান্ত।
বাজেট বক্তৃতায় তার সুরও লক্ষ
করা গেছে, তিনি বলেছেন,
‘নির্বাচনোত্তর দেশের রাজনৈতিক
পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে। ফলে,
বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়বে।’ কিন্তু
আদতে এর বেশির ভাগই বাস্তবে রূপ
লাভ করেনি।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ৮০ বছর
পেরিয়ে যাওয়া অর্থমন্ত্রী তখন
হয়তো ‘ঘুণাক্ষর’ও আন্দাজ
করতে পারেননি পরবর্তী ২০১৫ সাল
তার জন্য কী বার্তা বয়ে আনছে।
তা হলে হয়তো তিনি প্রবৃদ্ধির সূচক
কিছুটা নিচের
দিকে নামিয়ে আনতেন।
একটি গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক
নির্বাচনের দাবিতে গত ৫
জানুয়ারি থেকে শুরু
হয়েছে বিরোধীদলীয় জোটের
টানা অবরোধ। এর সাথে নিয়মিত
বিরতিতে যুক্ত হচ্ছে ৭২ থেকে ৮৬
ঘণ্টার দেশব্যাপী হরতাল। অর্থমন্ত্রীর
নিজের ভাষায়, ‘এই অবরোধের
কারণে পুরো রাজধানী ঢাকা সারা
দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
আর এতে সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন
দেশের কৃষকেরা। তারা এখন
পথে বসে গেছেন।’ এই যখন দেশের
অবস্থা তখন অর্থবছরের
মাঝামাঝি সময়ের পর থেকে দেশের
সামষ্টিক অর্থনীতি ক্রমে খারাপের
দিকে চলে যাচ্ছে। শুরু
হয়েছে অর্থনীতির
উল্টো পথে যাত্রা! এ যাত্রা কোথায়
গিয়ে ঠেকবে তা নির্ভর করছে চলমান
রাজনৈতিক অস্থিরতা আর কত দিন
চলে তার ওপর।
রফতানি প্রবৃদ্ধি আশঙ্কাজনকভাবে কমছ
ে : ধরা যাক রফতানি বাণিজ্যের
কথাই। এ খাতে প্রবৃদ্ধির অবস্থা বেশ
খারাপ। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর
(ইপিবি) সর্বশেষ পরিসংখ্যান
অনুযায়ী চলতি বছর জুলাই-
জানুয়ারি সাত
মাসে রফতানি খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে
মাত্র ২ শতাংশ। গত অর্থবছর একই সময়ে এ
খাতে প্রবৃদ্ধি ছিল ১৫ শতাংশ।
মাসিক ভিত্তিতেও
রফতানি খাতে প্রবৃদ্ধি কমে গেছে।
চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে এ
খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫ শতাংশ। গত
বছরের জানুুয়ারিতে যা ছিল ৮
শতাংশ।
ধাক্কা খাচ্ছে রাজস্ব আদায় : সে সময়
কিন্তু অবরোধ-হরতালের
মতো রাজনৈতিক কর্মসূচি শুরু হয়নি।
কিন্তু তারপরও জুলাই-ডিসেম্বর
সময়ে রাজস্ব আদায় কাক্সিত
লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে ব্যর্থ হয়েছে।
চলতি ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরের জুলাই-
ডিসেম্বর ছয় মাসে রাজস্ব
আদায়ে ঘাটতি হয়েছে দুই হাজার
কোটি টাকা। জাতীয় রাজস্ব
বোর্ডের (এনবিআর) আওতায় জুলাই-
ডিসেম্বর সময়কালে রাজস্ব আদায়ের
লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬১ হাজার ১১৯
কোটি টাকা। কিন্তু এর
বিপরীতে আদায় সম্ভব হয়েছে ৫৯
হাজার ১১৫ কোটি টাকা। এ অর্থবছর
এনবিআরের আওতায় রাজস্ব আদায়ের
লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত রয়েছে ১
লাখ ৪৯ হাজার ৭১২ কোটি টাকা। বছর
শেষে এই আদায়
নিয়ে রীতিমতো শঙ্কা দেখা দিয়েছ
ে। অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা রাজস্ব
আদায়ের
লক্ষ্যমাত্রাকে উচ্চাভিলাষী এবং অর্
জন হবে না বলে উল্লেখ করেছেন।
বলা হয়েছিল, বছর শেষে লক্ষ্যমাত্রার
চেয়ে আদায়ের ঘাটতি থাকবে প্রায়
৫ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু এখন
দেড় মাস ধরে রাজনৈতিক
অস্থিরতা চলছে তাতে এই ঘাটতি ১০
হাজার
কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাওয়ার
আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
এটি আরো বাড়তে পারে যদি অবরোধ
-হরতালের বিস্তৃতি দীর্ঘমেয়াদি হয়।
বিনিয়োগ নেই, কিন্তু
বাড়ছে আমদানি : দেশে বড়
কোনো বিনিয়োগ নেই।
সেটি দেশী হোক বা বিদেশী।
কিন্তু তারপরও
বেড়ে চলেছে আমদানি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ
পরিসংখ্যানে দেখানো হয়েছে চলত
ি অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর
সময়ে আমদানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৮
দশমিক ৩১ শতাংশ। গত অর্থবছরের একই
সময়ে যা ছিল ৫ দশমিক ৫৩ শতাংশ।
অর্থনীতিবিদেরা আশঙ্কা করছেন,
দেশে দৃশ্যমান কোনো বড় বিনিয়োগ
না হওয়া সত্ত্বেও
আমদানি বেড়ে যাওয়া রহস্যময়।
আমদানির নামে দেশ থেকে অর্থ
পাচার
হচ্ছে কি না তা খতিয়ে দেখার
প্রয়োজন রয়েছে।
বিদেশী সংস্থা বলছে, বাংলাদেশ
থেকে প্রতি বছর বিপুল অর্থ পাচার
হয়ে যাচ্ছে।
কমছে রেমিট্যান্স : বিদেশ
থেকে পাঠানো রেমিট্যান্সের
পরিমাণও কমে আসছে। গত
ডিসেম্বরে যেখানে রেমিট্যান্স
এসেছিল ১২৭ কোটি মার্কিন ডলার,
সেখানে জানুয়ারি মাসে এসেছে ১
২৩ কোটি মার্কিন ডলার। গত বছরের
একই সময়ের তুলনায় এবার রেমিট্যান্স
কমেছে ২ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ।
খাদ্য মূল্যস্ফীতিও বাড়ছে : চলমান
রাজনৈতিক অস্থিরতায় খাদ্য
মূল্যস্ফীতিও বেড়ে যাচ্ছে।
ডিসেম্বরে যেখানে এ
খাতে মূল্যস্ফীতি ছিল ৫ দশমিক ৮৬
শতাংশ।
সেখানে জানুয়ারিতে এসে তা বেড়
ে হয় ৬ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ। বর্তমান
পরিস্থিতি অব্যাহত
থাকলে মূল্যস্ফীতি যে আরো বাড়বে
তা নিয়ে কারো সন্দেহ নেই।
জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন হচ্ছে না :
চলতি অর্থবছরের বাজেটে দেশের
মোট দেশজ উৎপাদন
বা জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য
ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ৩ শতাংশ। কিন্তু
এটি যে অর্জন
করা যাচ্ছে না তা অর্থমন্ত্রী নিজেও
স্বীকার করেছেন। বাংলাদেশ
ব্যাংক বলছে, এবার
জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে সাড়ে ৬
শতাংশ। অন্য দিকে বিশ্বব্যাংকের
হিসাব ৬.২%, আইএমএফ-৬.২%,
এবং এডিবির হিসাব-৬.৪%।
অর্থমন্ত্রী বলেছেন,
বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ
বাড়বে। কিন্তু তা কিভাবে তার
কোনো দিকনির্দেশনা পাওয়া যাচ্ছ
ে না। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সদ্য
ঘোষিত
মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতে ঋণপ্
রবাহ বাড়ানোর ল্যমাত্রা নির্ধারণ
করা হয়েছে। কিন্তু তা অর্জন
নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
চলতি অর্থবছরের জুলাই
থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রথম ছয়
মাসে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ
বাড়ানোর ল্যমাত্রা ছিল ১৪ শতাংশ।
কিন্তু ডিসেম্বর পর্যন্ত তা অর্জন
হয়েছে ১২ দশমিক ৭ শতাংশ। বাকি ১
দশমিক ৩ শতাংশ অর্জিত হয়নি। গত
জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত
দেশে কোনো রাজনৈতিক
অস্থিরতা ছিল না। তারপরও
বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ
বাড়ানোর ল্যমাত্রা অর্জিত হয়নি।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেড় মাসেরও
বেশি সময় ধরে চলা হরতাল-অবরোধের
কারণে তাদের ক্ষতি এক লাখ
কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। এই
ধাক্কাটি দেশের
অর্থনীতি কিভাবে সামাল
দেবে তা এখন দেখার বিষয়
বলে মতপ্রকাশ করেছেন অর্থনৈতিক
বিশ্লেষকরা।
Posted 4 hours ago by Kutubi Coxsbazar
Labels: অর্থনীতি, নয়া দিগন্ত, সৈয়দ
সামসুজ্জামান নীপু
22
FEB অর্থনীতির
উল্টো পথে যাত্রা by সৈয়দ
সামসুজ্জামান নীপু
0 Add a comment
আর ২৫ থেকে ৫০ বছর পর
বাংলা ভাষা কেমন হবে—এ
নিয়ে শিক্ষিতজনের
মনে নানা উদ্বেগ। এই উদ্বেগের
পেছনে আছে পড়ার সংস্কৃতির অবক্ষয়
এবং ভাষার মানে টান পড়া। একসময় বই
পড়াটা ছিল অনেকের কাছেই
অভ্যাসের বিষয়। পরিবারগুলোর
সংগ্রহে থাকত বই, বন্ধুবান্ধব-
সহপাঠীদের মধ্যে আদান-প্রদান
হতো বই। অনেক স্কুলেই গ্রন্থাগার
ছিল, শিক্ষাক্রম ছিল বইবান্ধব। এখন বই
পড়াটা চলে গেছে টিভি দেখা,
ইন্টারনেট ঘাঁটা আর সামাজিক
যোগাযোগ
মাধ্যমগুলোতে ঘুরে বেড়ানোর
চর্চার পেছনে। যারা বই পড়ছে, তাদের
একটা বড় অংশ পড়ছে জনপ্রিয়
সাহিত্যের ফাঁদে। জনপ্রিয়
সাহিত্যের চমক আছে, স্থায়িত্ব নেই;
মনকে তা আনন্দ দেয়,
চিন্তাকে খোরাক দেয় না।
শিক্ষিতজনের উদ্বেগের তালিকায়
বড় জায়গা নিয়ে আছে ভাষার
ক্ষেত্রে নানা শৈথিল্য, যা এর
মানটাকে কিছুতেই প্রতিষ্ঠা দেয়
না। একসময় শিক্ষিতজনেরা সবার
কাছে গ্রহণযোগ্য একটা ভাষার
ক্ষেত্রে একমত হয়েছিলেন,
যা তাঁদের
চিন্তাভাবনাকে পরিশীলিতভাবে
উপস্থাপন করবে। এর কথ্য ও লিখিত, দুই
রূপের ব্যাপারেও মতৈক্য ছিল।
এটিকে কেউ বলেছেন প্রমিত, কেউ
মানভাষা। এটি ছিল আমাদের
মননশীলতার এবং আনুষ্ঠানিক ভাব ও
চিন্তা প্রকাশের একটি সম্মত রূপ। একসময়
এটিকে কর্তৃত্ববাদী, এলিটধর্মী ও
প্রাতিষ্ঠানিক বলে প্রশ্ন করা শুরু
হলো। এখন ‘মান’ বা ‘প্রমিত’ শব্দ
দুটি সন্দেহজনক একটি চরিত্র নিয়েছে।
এখন কেউ যদি বলে, আমাদের
একটি মানভাষার প্রয়োজন আছে,
তাকে নিয়ে অনেকে হাসাহাসি কর
বে; অনেকে বলবে,
লোকটা সেকেলে অথবা মতলববাজ।
ভাষাকে এখন
ছেড়ে দেওয়া হয়েছে পণ্যবিশ্বের
হাতে, দৃশ্যমাধ্যমের ঠাকুরদের হাতে;
ভাষার ব্যাপারে আমরা খুব স্পর্শকাতর
হয়ে পড়েছি। ভাষার মান
নিয়ে কোনো কথা তুললে একটা হইচ
ই পড়ে যায়। না,
হইচইটা মানটাকে ওপরে তোলার
পক্ষে নয়,
হইচইটা ভাষা নিয়ে রক্ষণশীলতা দেখ
ানোর অভিযোগে।
মান যে পড়ছে,
তা তো বোঝা যায়
বাংলা ভাষার ব্যবহার দেখে। অনেক
শিক্ষিতজনের বাংলা এখন শিথিল—
তা ব্যাকরণ মানে না, শুরু ও শেষের
যৌক্তিক সম্পর্কটি মানে না।
ভাষার অনেক রূপের
নিজস্বতা মানে না (এগুলোর
সংমিশ্রণ যদিও মানে), ঋণ-শব্দের
কার্যকরণ মানে না। কেউ যদি প্রশ্ন
তোলে, বাংলা ভাষায়
বিদেশি (ইংরেজি, হিন্দি) শব্দের
অকারণ অনুপ্রবেশ ঘটছে, ভাষা সে জন্য
দূষিত হচ্ছে, তাকে একেবারে উনিশ
শতকের ভাষা-
সংস্কৃতিকে পাঠিয়ে দিয়ে এ
কথা প্রমাণ করার চেষ্টা চলবে,
তরুণেরা যদি এ রকম মিশ্র
ভাষা ব্যবহার করে, তাহলে সেটিই
বাংলা ভাষার অবধারিত ও
নিয়তি নির্দিষ্ট রূপ। এটিই সময় ও
সংস্কৃতির পরিক্রমায়
হয়ে ওঠা বাংলা ভাষা।
কথ্য বাংলার মান নেমে যাওয়ার
প্রশ্নটি না হয় বোঝা গেল—
প্রতিদিনের চর্চায় এর কাঠামোগত,
উচ্চারণগত এবং নান্দনিক
বিচ্যুতিগুলো এখন অনস্বীকার্য (যদিও
কারও কারও মতে, এখানে মান
থেকেও বেশি বিবেচ্য ভাষার
বিবর্তন এবং নতুন রূপে এর উদ্ভবের
পেছনে সক্রিয় ঐতিহাসিক
অনিবার্যতা)। কিন্তু লিখিত
বাংলার? কল্পনার
দিগন্তটা ছোঁয়া যায়, প্রকাশের
পথগুলো ঘুরে আসা যায়
যে বাংলায়, তা কি আমাদের
শিক্ষার্থীদের শেখাচ্ছি আমরা?
তা কি আয়ত্তে আসছে তাদের?
লিখিত বাংলা কি ক্রমাগত
একটা উৎকর্ষের দিকে যাচ্ছে?
ভাষা নিয়ে বিতর্কটা জরুরি।
ভালো বিতর্ক একটা প্রতিষ্ঠিত
বিষয়কেও নতুন মাত্রায়
তুলে ধরতে পারে, নতুন
আলো ফেলতে পারে অবহেলিত
কোনো অঞ্চলে। কয়েক বছর
ধরে ভাষা নিয়ে নতুন করে ভাবছেন
অনেকেই। পক্ষে-বিপক্ষের এসব
ভাবনা-
আলোচনা বাংলা ভাষাকে আমাদ
ের মনোযোগের
কেন্দ্রে নিয়ে আসছে।
এটি একটি শুভলক্ষণ।
ভাষার ভবিষ্যৎ নিয়ে শুরু করেছিলাম।
এক বা দুই প্রজন্ম পর
বাংলা ভাষা কি টিকে থাকতে পা
রবে ইংরেজির সঙ্গে যুদ্ধ করে? এ রকম
একটি প্রশ্ন অনেকেই আমাকে করেন।
তাঁরা আমাকে বলেন
দেশে ইংরেজি মাধ্যমের/ভার্সনের
শিক্ষার্থী বাড়ছে; প্রাইভেট
বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পাবলিক
বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে বেশি শি
ক্ষার্থী পাচ্ছে (জাতীয়
বিশ্ববিদ্যালয় বাদ দিলে)। এদের
পাঠ্যক্রমের ও পাঠদানের
ভাষা ইংরেজি।
একটি কাগজে একটি গবেষণা প্রতিবে
দন বেরিয়েছে।
সেখানে দেখা যাচ্ছে, প্রাইভেট
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর
শিক্ষার্থীরা বাংলা বই কেনেন খুব
কম—৭ থেকে ৯ শতাংশ শিক্ষার্থী শুধু
মোটামুটি বাংলা বই কেনেন।
ইংরেজি মাধ্যমের স্থলে এটি ১
থেকে ২ শতাংশ। আমি আরও শুনি,
ভাষার মান কমে যাওয়ায়
ধ্রুপদি সাহিত্যের বই পড়ে এখন
অনেকেই আনন্দ পাচ্ছে না। বই এখন
উপহারের তালিকায় নেই।
পরিবারগুলো বই পড়াকে এখন আর
গুরুত্বপূর্ণ ভাবে না।
এক তরুণ আমাকে বললেন, বইমেলায় প্রচুর
বই বিক্রি হয়। তা ঠিক। প্রতিবছর বই
বিক্রির সংখ্যা বাড়ছে, এটিও ঠিক।
কিন্তু ১৭ কোটি মানুষের
একটি দেশে একুশের বইমেলায়
প্রতিবছর আগের বছরের তুলনায় এক
কোটি টাকার বেশি বই
বিক্রি হওয়া মানে মাথাপিছু ছয়
পয়সা বৃদ্ধি। এর থেকে অনেক
বেশি বৃদ্ধি তো সিগারেট
বিক্রিতে হয়, বল সাবান
অথবা রিকশার টায়ার বিক্রিতে হয়।
তা ছাড়া, বেশি বিক্রি হওয়া বই
কোন শ্রেণির, তার একটা হিসাব
নিলে খুব আশাবাদী হওয়া কি যায়?
আমি স্বীকার করি, ১৭
কোটি মানুষের দেশে বই বিক্রির
পরিসংখ্যান হতাশাজনক, ভাষার
মানে টান পড়াটা কষ্টকর, ভাষার দূষণ ও
বিকৃতি দুঃখজনক। কিন্তু এক বা দুই প্রজন্ম
অর্থাৎ ২৫ থেকে নিয়ে ৫০ বছর পর
বাংলা ভাষার অবস্থান
বা প্রকৃতি নিয়ে আমার খুব
একটা দুশ্চিন্তা নেই।
আমি বাংলা ভাষার ভবিষ্যৎ
নিয়ে আশাবাদী, বাংলা বইয়ের
ভবিষ্যৎ নিয়েও চিন্তাহীন।
আমি বর্তমানের বিচ্যুতি, অসংগতি,
শৈথিল্য ইত্যাদি নিয়ে ভাবি বটে,
কিন্তু জানি এসব দীর্ঘস্থায়ী নয়।
একটা গুণগত পরিবর্তন যে আসবে,
ভাষা জেগে উঠবে তার সব
মহিমা নিয়ে, এটি ইতিহাসই
আমাদের বলে দেয়।
আমার আশাবাদের
ভিত্তি হচ্ছে বাংলা ভাষার
অন্তর্গত শক্তি, বাংলাদেশের
অর্থনীতির ক্রমোন্নতি,
বাংলা ভাষার সম্ভাব্য
প্রতিদ্বন্দ্বীদের ওপর এর নিয়ন্ত্রণ
প্রতিষ্ঠা এবং শিক্ষিতের হার
বৃদ্ধি ও ‘শিক্ষিত’-এর সংজ্ঞার
পরিবর্তন। বাংলা ভাষা বিশ্বের আর
দশটা ভাষার মতো নয়, এর
মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য তরুণেরা রক্ত
দিয়েছে।
বাংলা ভাষা রাষ্ট্রভাষা—এ রকম
একটি দেশই আছে পৃথিবীতে, এর
ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ২৮
কোটি। এর একটি সমৃদ্ধ
এবং পুরোনো সাহিত্য ঐতিহ্য
আছে। পৌনে দুই শ বছর ইংরেজ ও ২৪
বছর
পাকিস্তানি উপনিবেশে কাটিয়েও
এ ভাষা হারিয়ে যায়নি। আর দুই প্রজন্ম
পর এই শক্তির জায়গাটি ছোট
হওয়া তো দূরে থাক, বড়ই বরং হবে।
পশ্চিম বা চীন-জাপানের
দিকে তাকালে বোঝা যায়,
একটা ভাষার বিকাশের ও প্রসারের
পেছনে অর্থনীতি কত বড়
ভূমিকা রাখে। বাংলা ভাষার
রাজধানী এখন ঢাকাতেই, দীর্ঘদিন
তা কলকাতায় থাকলেও
বাংলাদেশের অর্থনীতি মজবুত হচ্ছে,
জীবনমান উন্নত হচ্ছে। আগামী ২৫
বছরে এই উন্নতি হবে চোখে পড়ার
মতো। ভারতের তুলনায়
আমরা যেখানে এগিয়ে, তা হচ্ছে এই
উন্নতি গ্রামকে বদলে দিচ্ছে, যেহেতু
উন্নয়নের পেছনের
কারিগরেরা বেশির ভাগ এসেছেন
গ্রাম থেকে। এখন মানুষ আর
রাজনীতির মানুষ নয়, এখন মানুষ
অর্থনীতির। অর্থনীতি মজবুত
হলে যোগাযোগ বাড়ে।
যোগাযোগের মাধ্যম
সক্রিয়তা পায়। বাঙালি সচ্ছল
হলে ইংরেজির দিকে যাবে।
তবে অনেক বেশি যাবে বাংলার
দিকে। অর্থনৈতিক
উন্নতি পণ্যবিশ্বকে টগবগে করে দেয়।
পণ্যের উদ্দেশ্য বিক্রি হওয়া, পণ্যবিশ্ব
ভয়ানক গতিশীল এবং পণ্যবিশ্ব নিজের
প্রয়োজনে এর প্রবাহ
মাধ্যমগুলোতে সক্রিয় করে।
ভাষা হচ্ছে পণ্যবিশ্বের এক নিতান্ত
প্রয়োজনীয় উপকরণ। নিজের
প্রয়োজনেই তাই ভাষাকে তা সমর্থন
দেবে, গায়ে-গতরে একে বাড়াবে।
দেশের ভেতরে পণ্যবিশ্বের
দূতিয়ালি করার জন্য
বাংলা ভাষাকে শক্তিশালী করাট
া তাই নির্বিকল্প হয়ে দাঁড়াবে।
পণ্যের স্পর্শে যা হয়, নিশ্চয়,
বাংলা বিকৃত হবে, শুরুতে,
বিজ্ঞাপনের বাংলা এখন যেমন।
কিন্তু পণ্যের পেছনে অর্থশক্তি যত
বাড়বে, ভাষাও তত শক্তি পাবে। আপন
শক্তিতেই তখন
ভাষা খুঁজে পাবে নিজেকে সুরক্ষার
পথ ও আস্থা।
এখন বাংলা সাহিত্যের দুর্দিন
যাচ্ছে বলে যাঁরা দুঃখ করেন, তাঁদের
বলি, সব যুগেই বলা হয়েছে সাহিত্যের
দুর্দিন যাচ্ছে। কিন্তু অর্থনীতি যখন
উন্নত হবে, বই বিক্রি বাড়বে (পৃথিবীর
সব উন্নত দেশেই তা হয়েছে)। অনেক
লেখক যখন শুধু লেখালেখি থেকেই
জীবিকা অর্জন করতে পারবেন, তখন
সাহিত্যের দৃশ্যপট পাল্টাবেই। দুর্দিন
যাচ্ছে কথাটা অনেকেই অবশ্য বলবেন,
তবে সেটি অভ্যাসের একটি কথার
মতোই শোনাবে। ধরা যাক, বই
বিক্রি এখন বছরে ৫০ লাখ, যেদিন
তা পাঁচ
কোটিতে দাঁড়াবে (অর্থনীতির সূত্র
বলে, সেটি হতে পারে এবং এই
সংখ্যায় ই-বুক, ভার্চুয়াল বুক—সবই
ধরা হলেও) সেদিন পাঠক-লেখকের
মিথস্ক্রিয়াটাও পাল্টে যাবে।
এবং এর সঙ্গে যোগ করুন নতুন
করে অক্ষরজ্ঞান পাওয়া মানুষ।
আমাদের দেশে এখনো ৪০ শতাংশ
মানুষ লিখতে-পড়তে জানেন না। এই
সংখ্যা যেদিন শূন্যে নামবে, সেদিন?
২৫ বছর
সামনে তাকালে আমি যে ছবি দেখত
ে পাই: একটি সমৃদ্ধ, গতিশীল
এবং আত্মবিশ্বাসী দেশ। তার
শিক্ষাচিত্র ঈর্ষণীয়। মানুষ স্বাবলম্বী,
নিজের পায়ে দাঁড়াতে সক্ষম,
দৃশ্যমাধ্যমের প্রথাগত
প্রকাশগুলো বদলে গেছে, মানুষ
ফিরে পাচ্ছে বইয়ের স্পর্শ ও আনন্দ।
মানুষ শিক্ষিত ও সচ্ছল, ফলে তার
ভাষায়ও এসেছে শক্তি। তার
ভাষা আর শিথিল নয়।
যে ভাষা ব্যবহার করছে মানুষ,
তা পরিশীলিত, তাতে ইংরেজির
মিশেল থাকলেও তা ভয়াবহ নয় (তার
কারণ, প্রাথমিক স্তর থেকেই শিক্ষার
মান বাড়তে থাকায়, ভাষাশিক্ষার
মান বাড়তে থাকায়)।
২৫ বছর পরের বাঙালি তরুণ
হবে আত্মবিশ্বাসী।
সে প্রতিযোগিতা করবে বিশ্বের
সঙ্গে। সে দেখবে ফরাসিরা,
জাপানিরা, ওলন্দাজরা কী যত্নে,
কী নিষ্ঠায় ব্যবহার করে,
চর্চা করে তাদের মাতৃভাষা। এই
তরুণেরাও বাংলাকে সেই নিষ্ঠায় ও
ভালোবাসায় ব্যবহার করবে।
তাদের আরও আত্মপ্রত্যয়ী ও নিষ্ঠাবান
করার জন্য প্রতিবছর ফিরে আসবে অমর
একুশে। ২৫ বছর পর একুশ এবং একাত্তর
নিয়ে কোনো বিভ্রম
থাকবে না ওই তরুণদের। তখন একুশ
এবং একাত্তর হবে জেগে ওঠার
নিরন্তর অনুপ্রেরণার নাম।
সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম: কথাসাহিত্যিক।
অধ্যাপক, ইংরেজি বিভাগ,
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
Posted 4 hours ago by Kutubi Coxsbazar
Labels: আলোচনা, উপ-সম্পাদকীয়, প্রথম
আলো, মতামত, রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন,
সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম
22
FEB
Home »
শহীদ মিনার গড়ে উঠেছিল
রাজনৈতিক প্রতিবাদের প্রতীক ও
হাতিয়ার হিসাবে।
» শহীদ মিনার গড়ে উঠেছিল
রাজনৈতিক প্রতিবাদের প্রতীক ও
হাতিয়ার হিসাবে।
শহীদ মিনার গড়ে উঠেছিল রাজনৈতিক প্রতিবাদের প্রতীক ও হাতিয়ার হিসাবে।
Written By Unknown on শনিবার, ২১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৫ | ১০:৫৪ PM
Related Articles
If you enjoyed this article just Click here Read Dhumketo ধূমকেতু, or subscribe to receive more great content just like it.
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন