‘নিলামে তোলা হবে আমার
স্ত্রীকে’
আজিজুলহাকিম বাদল, সময়ের
কণ্ঠস্বরঃ
‘আমার
স্ত্রী রেন্টিনা চাকমাকে নিলামে তোলা হবে।
আমি আমার স্ত্রীকে সম্পুর্ণ সুস্থ
অবস্থায় ফেরত চাই। একবিংশ
শতাব্দীতে এসে বাংলাদেশে কোনো মেয়েকে নিলামে তোলার
মতো মধ্যযুগীয় বর্বরতা সংঘটিত
হতে পারে,
সেটা জেনে আপনারা হয়তো অবাক
হতে পারেন । তবে এর
আশঙ্কা রয়েছে।’
কথাগুলো বলছিলেন একটি দৈনিক
পত্রিকার প্রাক্তন ফটোগ্রাফার
সৈকত।
পাহাড়ি তরুণী রেন্টিনা চাকমাকে ভালবেসে বিয়ে করেন
সৈকত। পরিবারের
অমতে বিয়ে করায়
রেন্টিনা চাকমার ওপর
নেমে আসে মধ্যযুগীয় নির্যাতন।
এই মধ্যযুগীয় নির্যাতনের
প্রতিবাদে এবং রেন্টিনা চাকমার
সন্ধানের দাবিতে সোমবার
ঢাকা রিপোর্টার্স
ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলন
করেছেন তার স্বামী সৈকত ভদ্র।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত
বক্তব্যে পরিচয় থেকে পরিণয়, এরপর
ঢাকা থেকে অপহরণ
করে খাগড়াছড়িতে নিয়ে স্ত্রী রেন্টিনাকে মধ্যযুগীয়
নির্যাতনসহ নিলামে তোলার
ব্যাপারে আশংকা প্রকাশ করেন
সৈকত।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন,
২০১০ সালে জাতীয়
মুক্তি কাউন্সিলে সাংগঠনিক
কাজের সূত্র
ধরে রেন্টিনা চাকমার
সঙ্গে আমার পরিচয় হয় ।
আমি বাংলাদেশ লেখক
শিবিরের সদস্য। আমার
স্ত্রী রেন্টিনা পাহাড়ি ছাত্র
পরিষদের (ইউপিডিএফ এর অঙ্গ
সংগঠন) সদস্য। ২০১৩ সালের ২
অক্টোবর আমরা বিশেষ বিবাহ
আইনে বিয়ে করি। চাকরির
কারণে রেন্টিনা খাগড়াছড়িতে এবং আমি ঢাকায়
থাকতাম।
রেন্টিনা ২০১৪ সালের
মে মাসের প্রথম
দিকে ঢাকাতে আসে আমার
সঙ্গে দেখা করতে। রেন্টিনার
পরিবার ঘটনা জেনে যাওয়ায়
বিয়েটাকে পুরোপুরি গোপন
করে খুব দ্রুত ওর অমতে ওকে অন্যত্র
বিয়ে দেবার চেষ্টা করে। ২৩
মে ২০১৪ তারিখে ওর অমতে ওর
ওপর বিয়ের নামে প্রহসন করা হয়।
এরপর গোপনে রেন্টিনা আমার
সঙ্গে যোগাযোগ করে। সে আবার
ঢাকায় আসলে ৫ জুন আমরা বিয়ের
রেজিস্ট্রেশনের কাজ সম্পন্ন
করে আমার গ্রামের বাড়ি যশোর
চলে যাই। যশোরে থাকার সময়
ইউপিডিএফের হুমকি অব্যাহত
থাকলে রেন্টিনাকে নিয়ে ৯ জুন
যশোর সদর থানায় গিয়ে সাধারণ
ডায়েরি করি।
এর কিছুদিন পর পরিস্থিতি শান্ত
মনে হওয়ায় যশোর
থেকে আমরা ঢাকা আসি।
এর মধ্যে রেন্টিনার বাবা-
মা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ
করতে থাকেন
এবং তারা বোঝাতে থাকেন
যে, তারা আমাদের
সম্পর্কটাকে মেনে নিয়েছেন।
আমাদেরও ভালো লাগে তাদের
আচরণে।
গত বছরের ৩ আগস্ট আমার
শাশুড়ি আমাদের
না জানিয়ে ঢাকার
দিকে রওনা হন। রওনা দেওয়ার পর
আমাদের জানান তিনি। তিন
দিন আমাদের বাসায় থাকেন
তিনি। এর মধ্যে আমার শ্বশুর ফোন
করে বলেন যে, তোমাদের
আমরা মেনে নিয়েছি। এখন আর
সমস্যা নেই।
গোপনে রেন্টিনা এসে দুদিন
ঘুরে যাক। আর রেন্টিনার
মা যে ওখানে গেছে,
সেটা সমাজের কেউ জানে না।
কিন্তু রেন্টিনা কোনোভাবেই
তাদের প্রস্তাব গ্রহণ করে না।
আমরা কোনোভাবেই
খাগড়াছড়ি যেতে না চাইলে,
আমার শাশুড়ি একাই ওই দিন
ফিরে যাবার সিদ্ধান্ত নেন।
আমরা দুজনে টিকেট
কাটতে কল্যাণপুর বাস
কাউন্টারে গেলে শাশুড়ি ফোন
করে বলেন যে, তার শরীর ভাল
লাগছে না। তিনি পরের দিন
যাবেন। তখন ৬ আগস্ট সকালের
টিকেট
কাটতে চাইলে তিনি বলেন যে,
রাতের গাড়িতে যাবেন ।
আমরাও রাতের শ্যামলী বাসের
টিকেট কাটি। পরের দিন
আমি যথারীতি বাইরে বের হই।
রেন্টিনা তার
মাকে নিয়ে শাহাবাগের
দিকে ঘুরতে যায় বিকেলের
দিকে। রাতেই গাড়ি।তাই আমার
শাশুড়ি তাড়াহুড়ো করতে থাকেন।
শ্বশুর রেন্টিনাকে বলেন যে, তোর
মা যেহেতু চেনে না, তাই
গাড়ি না ছাড়া পর্যন্ত
বাসস্ট্যান্ডে থাকিস।
আমরা তাদের ষড়যন্ত্র
কোনোভাবেই বুঝতে পারিনি।
আমি কাউন্টারের একটু
দূরে পৌঁছালে দেখি, অনেক
পাহাড়ি ছেলে ওখানে। তাদের
কজন যে ইউপিডিএফের সদস্য
সেটা বুঝতে পারি। রেন্টিনাও
আমাকে তার ভীতির
কথা জানায়। মায়ের আচরণও
যে পাল্টে গেছে সেটাও
জানায় রেন্টিনা।
সে আমাকে আমার বন্ধুদের
ডাকতে বলে। আমি আমার বন্ধুদের
জানাই। গাড়ি আসতে তখনও অনেক
দেরি। আমার বন্ধুরা জানায়
যে তারা আসছে। আমি একটু
দূরে ফোনে কথা বলতে থাকি।
পাহাড়ি ছেলেরা চারদিকে ভাগ
হয়ে যায়। আমি এ সময় ঠিকমত
সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলাম না।
আমার ওপর আক্রমণের
আশঙ্কা থেকে সিদ্ধান্ত নিলাম
যে, আর কিছুক্ষণের মধ্যেই আমার
বন্ধুরা চলে আসবে, দুজন এক
জায়গায় থাকি, তারপর যা হয় হবে।
এই
ভেবে কাউন্টারে গেলে দেখি রেন্টিনা নেই,
পরক্ষণে খোঁজাখুঁজি করে জানতে পারি,
কয়েক জন ছেলে এসে আমার
স্ত্রীকে সামনে ডাকে। তারপর
জোর
করে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়।
তারপর থেকে আমার শ্বাশুড়ি আর
রেন্টিনার ফোন বন্ধ পাই।
ওই দিন রাতেই মিরপুর থানায়
গিয়ে অপহরণের
মামলা করতে গেলে প্রথমে মামলা নিতে চাইলেও
পরে মামলা হবে না বলে জানায়
পুলিশ। তখন অন্যদের পরামর্শে ৭
আগস্ট সাধারণ ডায়েরি করি। ৭
আগস্ট রাতেই
রেন্টিনা আমাকে একটা এসএমএস
করে জানায় যে,
আমাকে মেরে ফেলার
পরিকল্পনা করা হযেছে, আমি যেন
অতি দ্রুত বাসা পাল্টাই। তারপর
থেকে তার আর কোনো খোঁজ
পাইনি অনেক দিন।
এর মাঝে রেন্টিনা আমার
সঙ্গে খুব গোপনে অনেকবার
কথা বলেছে অন্যদের ফোন
থেকে। তাকে আইনের
মাধ্যমে ওখান
থেকে নিয়ে আসার কথা বললে,
আমি আর কিছুদিন
অপেক্ষা করতে বলি।
সে জানায়,
তাকে খাগড়াছড়িতে নেওয়া হয়েছে।
তার পরিবারের সঙ্গে,
ইউপিডিএফের মিটিং হয়েছে।
যখন কোনো সমাধান হচ্ছে না, তখন
রেন্টিনার পরিবারের
কাছে কয়েক লাখ
টাকা চাঁদা দাবি করা হয়।
তা না দিলে ওকে ওদের
সমাজের মেয়েদের জন্য চরম
শাস্তি হিসেবে নিলামে তোলা হবে।
নিলামে তোলার সিদ্ধান্ত
হলে দু-একদিনের মধ্যে ইউপিডিএফ
তাকে বাড়ি থেকে জোর
করে শহরের পাশের
একটা গ্রামে আটকিয়ে রাখে।
রেন্টিনা গত ১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫
ওখান থেকে আমাকে ফোন
করে এবং খুব আতঙ্কিত
কণ্ঠে অতি সংক্ষিপ্তভাবে এসব
জানায়।
পরে আমি রেন্টিনার
বাবাকে ফোন করলে তিনি খুব
ভেঙে-
পড়া কণ্ঠে আমাকে জানান যে,
তার এখন কিছুই বলার নেই। তখন
থেকে আমি খুব আশঙ্কার
মধ্যে আছি। আমি বিভিন্ন
জায়গায় যোগাযোগের
চেষ্টা করি। পরের দিন
রেন্টিনার বাবা আমাকে আবার
ফোন করে বলেন যে, আমি যদি আর
কোনোভাবে রেন্টিনার খোঁজ
নেবার চেষ্টা করি,
তাহলে আমার দূরের মৃত্যু
কাছে চলে আসবে। আমি তারপর
আর কোনো যোগাযোগের
চেষ্টা না করে আইনের দ্বারস্থ হই।
আমার স্ত্রীকে সুস্থ অবস্থায়
ফিরে পেতে এবং বর্বর
নির্যাতনের হাত থেকে উদ্ধার
করতে গত ১২
ফেব্রুয়ারি ঢাকা জেলা ম্যাজিস্ট্রেট
আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির
১০০ ধারায় মামলা করি।
মামলা নং- ৬৪/২০১৫, স্মারক নং-
২২৪/(২)। বিজ্ঞ আদালত ১৯
ফেব্রুয়ারি তার বাবা-
মাকে রেন্টিনাকে নিয়ে ঢাকার
আদালতে হাজির হবার নির্দেশ
দেন। কিন্তু আমার
স্ত্রীকে নিয়ে তার পরিবার
আসে না। তখন আদালত
রেন্টিনাকে উদ্ধারের জন্য সার্চ
ওয়ারেন্ট ইস্যু করেন।
এ অবস্থায় আমি আমার
স্ত্রী রেন্টিনা চাকমাকে নিয়ে শঙ্কিত।
যত দ্রুত সম্ভব আইনের
মাধ্যমে আমি আমার
স্ত্রীকে ফেরত চাই।’
Home »
নিলামে তোলা হবে আমার
স্ত্রীকে’
আজিজুলহাকিম বাদল
» নিলামে তোলা হবে আমার
স্ত্রীকে’
আজিজুলহাকিম বাদল,
নিলামে তোলা হবে আমার স্ত্রীকে’ আজিজুলহাকিম বাদল,
Written By Unknown on বুধবার, ২৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১৫ | ৮:০১ PM
Related Articles
If you enjoyed this article just Click here Read Dhumketo ধূমকেতু, or subscribe to receive more great content just like it.
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন