সৌদি আরবের বাদশাহ আবদুল্লাহ গত ২৩ জানুয়ারি ইন্তেকালের পর তার উত্তরসূরি হিসেবে বাদশাহ সালমানের কাছে সন্ধিহীনভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হয়েছে। এর মাধ্যমে সৌদি আরবে কীভাবে দ্রুততার সঙ্গে রাজনৈতিক ক্ষমতা হস্তান্তর সম্পন্ন হয়, তার প্রমাণ পাওয়া গেল। প্রত্যাশিতভাবেই ইসলামের দুটি পবিত্রতম স্থানের হেফাজতকারী বাদশাহ সালমান একই দিন সিংহাসনের উত্তরাধিকারী যুবরাজ মুকরিনকে উপ-প্রধানমন্ত্রী পদে নিয়োগদান করেন। এদিন সকালে বাদশাহ সালমান যুবরাজ মুহাম্মদ বিন নাইফকে সিংহাসনের উপ-উত্তরাধিকারী যুবরাজ ও দ্বিতীয় উপ-প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ করেন। যে ডিক্রি জারি করে এদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তার মুখবন্ধে কী কারণে বা যোগ্যতাবলে এদের নিয়োগ দেওয়া হয়, তার উল্লেখ রয়েছে। বস্তুত আনুগত্যশীল এই কাউন্সিলই এদের নিযুক্তিকে প্রথাসিদ্ধ করে। ২০০৬ সালে আধুনিক সৌদি আরবের প্রতিষ্ঠাতা বাদশাহ আবদুল আজিজ তার সন্তান ও নাতিদের সদস্য করে এই কাউন্সিল গঠন করেন। এই কাউন্সিলই সৌদি আরবের বাদশাহিতন্ত্রের তথা সিংহাসনের উত্তরাধিকারী নির্বাচন করা থেকে অন্য ইস্যুগুলো নিষ্পত্তির ব্যাপারে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। যুবরাজ মুহাম্মদ বিন নাইফ বাদশাহ আবদুল আজিজের প্রথম নাতি হিসেবে সিংহাসনের উত্তরাধিকারক্রমে তার নাম যুক্ত হয়েছে। অতীতে বাদশাহ আজিজের ছেলেরাই সিংহাসনের উত্তরাধিকারক্রমে থাকতেন। এ কারণে সৌদি আরবের বাইরে অন্য দেশগুলোতে সিংহাসনের উত্তরাধিকারী নির্বাচন নিয়ে সংকটের উদ্ভব ঘটে থাকতে পারে বলে প্রচার পায়। এটাকে কেউ জায়মান সংকট বলেও অভিহিত করেন। ভিন্ন ভিন্ন দৃশ্যপট কল্পনা করে বিভিন্ন প্রবন্ধ-নিবন্ধ, এমনকি বই পর্যন্ত প্রকাশ পেয়েছে। এসব পণ্ডিতের ধারণাগুলো গড়ে উঠেছে অলীক কল্পনা থেকে। এতে সত্যের লেশমাত্র নেই। তাই এদের ভবিষ্যদ্বাণীগুলো সত্য হয় না। বস্তুত এদের ভবিষ্যদ্বাণীকে সেই পুরনো, 'যারা জানে তারা কথা বলে না আর যারা জানে না তারাই কথা বলে'_ প্রবচনের সঙ্গে তুলনা করা যায়।
গত ২৩ জানুয়ারিতে এই ত্বরিত ও নির্ণায়ক পরিবর্তনের ঘোষণা বাদশাহ সালমানের দীর্ঘকালের কাজের ধারাকেই প্রতিফলিত করে। এক সপ্তাহের মতো সময়ে ২৯ জানুয়ারি আরও ৩০টির বেশি রাজকীয় ফরমান জারি করা হয়েছে। এসব ফরমানের মধ্যে প্রতিরক্ষা, গোয়েন্দা সংস্থা, বেসামরিক প্রশাসন, স্বাস্থ্য, কৃষি, সামাজিক বিষয়ক, তথ্য, টেলিযোগাযোগ, পৌর বিষয়ক ও অন্য বিষয়গুলো রয়েছে। অন্যান্য ফরমানের মধ্যে জনপ্রশাসন পুনর্গঠনের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে শীর্ষে। একটি গুরুত্বপূর্ণ ডিক্রির মাধ্যমে ১২টি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কাউন্সিল ও কমিটি বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে :জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিল, ইসলামী বিষয়ক সুপ্রিম কাউন্সিল, সুপ্রিম অর্থনৈতিক কাউন্সিল, পেট্রোলিয়াম ও মিনারেলস সম্পর্কিত সুপ্রিম কাউন্সিল, প্রশাসনিক সংস্থা সম্পর্কিত সুপ্রিম কমিটি, সিভিল সার্ভিস কাউন্সিল, শিক্ষা সম্পর্কিত সুপ্রিম কাউন্সিল, শিক্ষানীতি সম্পর্কিত সুপ্রিম কমিটি, উচ্চশিক্ষা বিষয়ক কাউন্সিল, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পর্কিত বাদশাহ আবদুল আজিজ সিটি বিষয়ক সুপ্রিম কমিশন (কেএসিএসটি) এবং আণবিক ও নবায়নযোগ্য শক্তি সম্পর্কিত বাদশাহ আবদুল আজিজ সিটি বিষয়ক সুপ্রিম কাউন্সিল। উল্লেখ করা যায় যে, শেষোক্ত ৫টি কমিটি ও কাউন্সিল শিক্ষা ও বৈজ্ঞানিক গবেষণাকর্মের বিহিত করত। দুটি কাউন্সিল অর্থনৈতিক বিষয়াবলির সঙ্গে জড়িত ছিল। দুটি সিভিল সার্ভিস সংস্কার দেখত। এদের দায়িত্ব পালন যুগপৎভাবে ঘটত। ফলে দুটির সঙ্গেই আলাদা আলাদাভাবে আলোচনা করতে হতো নির্দিষ্ট বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য। এতে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য দীর্ঘ সময় লেগে যেত। কারণ এদের মধ্যে যতক্ষণ ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত না হয়, সে পর্যন্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ আটকে থাকত। সংস্থাগুলোর নিজস্ব আমলাগোষ্ঠী ছিল । অতএব, এখানেও লাল ফিতার দৌরাত্ম্য ছিল। এতে সংঘাত, ব্যয় উভয় প্রকারের ক্ষতি স্বীকার করতে হতো। এ কারণে এর সঙ্গে যুক্ত কাউন্সিলের সঙ্গে মন্ত্রণালয়গুলোর কনফিউশন দেখা দিত ও কাজে বিলম্ব ঘটত। অল্প কথায় বলতে গেলে আমরা সরকারের উচ্চ পর্যায়ে ওভারল্যাপিং, ডুপ্লিকেশন ও খণ্ডকরণ সমস্যার মধ্যে রয়েছি।
এর স্বাভাবিক পরিণতি হলো বিলম্ব ঘটা, কখনও কখনও পারস্পরিক সংঘাতে জড়িয়ে পড়া ও নিষ্ক্রিয়তা। ২৯ জানুয়ারি যে কাঠামো ঘোষণা করা হয়েছে সেখানে দুটি কাউন্সিল থাকার কথা বলা হয়েছে। এই কাউন্সিল দুটি আবার মন্ত্রিপরিষদ ব্যবস্থার সঙ্গে একীভূত থাকবে। কাউন্সিলের কোনো আলাদা আমলাতন্ত্র থাকবে না। মন্ত্রিপরিষদ সচিবালয় নবঘোষিত কাউন্সিল দুটির যাবতীয় কাজকর্ম করবে। কাউন্সিল দুটির মধ্যে একটি হলো_ রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা বিষয়ক কাউন্সিল, যার প্রধান থাকবেন দ্বিতীয় উপ-প্রধানমন্ত্রী। তিনি আবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব সামলাবেন। এই কাউন্সিলের যারা সদস্য থাকবেন তাদের মধ্যে রয়েছেন_ পররাষ্ট্র বিষয়ক, জাতীয় রক্ষীবাহিনী, প্রতিরক্ষা, তথ্য ও ইসলামী বিষয়ক মন্ত্রী ও সাধারণ গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান। কাউন্সিলে আরও দু'জন প্রতিমন্ত্রী যুক্ত থাকবেন। তার সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন মন্ত্রিপরিষদের সেক্রেটারি জেনারেল। দ্বিতীয়টি হলো অর্থনৈতিক ও উন্নয়ন বিষয়ক কাউন্সিল, যেটার প্রধান থাকবেন প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদায় যুবরাজ মুহাম্মদ বিন সালমান। এর সদস্য হবেন সরকারের প্রায় অন্য সব বিষয় নিষ্পন্নকারী ২১ জন অতিরিক্ত মন্ত্রী। এই কাউন্সিলের সচিব হিসেবে একই মন্ত্রিপরিষদের সেক্রেটারি জেনারেল দায়িত্ব পালন করবেন। এই দুটি কাউন্সিলকে অনেকটা মন্ত্রিপরিষদের সাব-কমিটি হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে। তাদের সুপারিশগুলো আপনাআপনিই সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য মন্ত্রিপরিষদে যাবে। নতুন এই কাঠামো অধিকতর ক্ষিপ্র ও দক্ষতর। এর ফলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়াটি দ্রুততর ও দৃঢ়বদ্ধ হবে। অতীতের জটিলতা অনেকাংশে কমে আসবে।
এই সংস্কারের আরও একটি উদ্দেশ্য রয়েছে। সেটি হলো বাদশাহর পরে মন্ত্রিপরিষদ, সর্বোচ্চ আইন প্রণয়নকারী সংস্থা ও নির্বাহী কর্তৃপক্ষকে ক্ষমতাবান করা। ডিক্রির মুখবন্ধে বিষয়টি স্পষ্ট করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, কাউন্সিল প্রতিরক্ষা, অর্থনৈতিক, ফিন্যান্স ও শিক্ষাসহ অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক বিষয় লিপিবদ্ধ করা ও বাস্তবায়ন পর্যবেক্ষণ করবে।
আরব নিউজ থেকে ভাষান্তর সুভাষ সাহা
Home »
» সন্ধিহীনভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হয়েছে। এর মাধ্যমে সৌদি আরবে কীভাবে দ্রুততার সঙ্গে রাজনৈতিক ক্ষমতা হস্তান্তর সম্পন্ন হয়, তার প্রমাণ পাওয়া গেল।
সন্ধিহীনভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হয়েছে। এর মাধ্যমে সৌদি আরবে কীভাবে দ্রুততার সঙ্গে রাজনৈতিক ক্ষমতা হস্তান্তর সম্পন্ন হয়, তার প্রমাণ পাওয়া গেল।
Written By Unknown on সোমবার, ৯ ফেব্রুয়ারী, ২০১৫ | ১০:৪০ PM
Related Articles
If you enjoyed this article just Click here Read Dhumketo ধূমকেতু, or subscribe to receive more great content just like it.
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন