Feb
18
সংলাপে বসুন -হাসিনা–খালেদাকে বান কি মুনের চিঠি by রাহীদ এজাজ
বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সহিংসতা থেকে উত্তরণে সংলাপে বসতে দুই নেত্রীকে আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে লেখা পৃথক দুই চিঠিতে বান কি মুন এ আহ্বান জানান।
নিউইয়র্ক ও ঢাকার কূটনৈতিক সূত্রগুলো জাতিসংঘ মহাসচিবের পক্ষ থেকে দুই নেত্রীকে চিঠি দেওয়ার বিষয়টি গত রোববার প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছে।
সূত্রটি জানায়, প্রধানমন্ত্রীকে বান কি মুন গত ৩০ জানুয়ারি চিঠি লিখেন। এর কয়েক দিন পর প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠিটি পৌঁছানো হয়। একই সময়ে বিএনপির চেয়ারপারসনকেও চিঠি পাঠানো হয়েছে।
বাংলাদেশে শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকো সরকারের সঙ্গে সমন্বয়ের দায়িত্ব দেওয়ার বিষয়টি ওই দুই চিঠিতে বান কি মুন উল্লেখ করেছেন।
প্রধানমন্ত্রীর কাছে বান কি মুনের চিঠি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি এ কে আবদুল মোমেন গতকাল মঙ্গলবার সকালে (ঢাকার সময়) প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ সম্পর্কে আমি কিছু জানি না।’ এ ধরনের চিঠি ঢাকায় জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারীর মাধ্যমে পৌঁছানো হয়েছে কি না প্রশ্ন করা হলে আবদুল মোমেন বলেন, সেটি হতে পারে।
তবে সরকারের উচ্চপদস্থ এক কর্মকর্তা এই প্রতিবেদককে জানান, গত সপ্তাহে চিঠিটি ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। আবার বিএনপির চেয়ারপারসন কার্যালয়ের একটি সূত্র গতকাল রাতে প্রথম আলোকে জানায়, খালেদা জিয়াকে লেখা বান কি মুনের চিঠিটিও গত সপ্তাহে পৌঁছেছে।
জাতিসংঘের মহাসচিবের সহযোগী মুখপাত্র এরি কানেকো ১২ ফেব্রুয়ারি ই-মেইলে প্রথম আলোকে জানান, বান কি মুন বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন।
জানা গেছে, দুই চিঠিতেই বিভিন্ন ক্ষেত্রে জাতিসংঘের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে বাংলাদেশের গুরুত্বের প্রসঙ্গটি টানেন বান কি মুন। বিভিন্ন সামাজিক উন্নয়ন সূচকের পাশাপাশি আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অর্জনের প্রশংসা করেন জাতিসংঘের মহাসচিব। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে যোগদানকারী অন্যতম শীর্ষ দেশ হিসেবে তিনি বাংলাদেশের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকার কথাও উল্লেখ করেন। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অগ্রগতি ও উন্নয়নের স্বার্থে শান্তি ও স্থিতিশীলতা জাতিসংঘের আগ্রহের বিষয় বলে বান কি মুন উল্লেখ করেন। বাংলাদেশের চলমান সহিংসতায় জাতিসংঘের গভীর উদ্বেগের কথা তুলে ধরে নিরপরাধ লোকজন সহিংসতার শিকার হওয়ায় তিনি গভীর উদ্বেগ জানান।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে লেখা চিঠিতে বান কি মুন বাংলাদেশে শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার জন্য সংসদের বাইরের বিরোধী দলকে নিয়ে আলোচনায় বসার অনুরোধ জানান। চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা ও ইতিবাচক উন্নয়নের ব্যাপারে জাতিসংঘ মহাসচিব ব্যক্তিগতভাবে অঙ্গীকারবদ্ধ। তাই সমস্যার সমাধানের লক্ষ্যে জাতিসংঘের রাজনীতিবিষয়ক (সাবেক) সহকারী মহাসচিব অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকোকে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে সমন্বয়ের জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তবে তারানকোকে বাংলাদেশে পাঠানোর পরিকল্পনা করছেন কি না সেটি তিনি চিঠিতে উল্লেখ করেননি।
খালেদা জিয়ার কাছে লেখা চিঠিতে সহিংসতা বন্ধের ওপর গুরুত্ব দিয়ে শান্তিপূর্ণ উপায়ে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের আহ্বান জানিয়েছেন বান কি মুন। বাংলাদেশে চলমান সমস্যার সমাধানে তিনি তারানকোকে দায়িত্ব দেওয়ার বিষয়টি চিঠিতে উল্লেখ করেন।
প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে লেখা এটাই প্রথম চিঠি। অবশ্য নির্বাচনের আগের বছর ২০১৩ সালে তিনি দুই নেত্রীকে সংলাপে বসতে মে ও নভেম্বর মাসে চিঠি লিখেন। আর একই অনুরোধ জানিয়ে দুজনকে ফোন করেন আগস্টে।
নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মতপার্থক্য দূর করতে জাতিসংঘ মহাসচিব কফি আনানের দূত হিসেবে তারানকো ২০১২ ও ২০১৩ সালে তিন দফায় ঢাকায় আসেন। ২০১৩ সালের ৬ ডিসেম্বর তিনি ছয় দিনের জন্য বাংলাদেশ সফর করেন। ওই সফরের সময় তিনি দুই দলকে আলোচনার টেবিলে বসালেও তাদের মতপার্থক্য দূর করতে পারেননি। তাই দুই দলকে দুই দফায় টেবিলে বসানোর ‘সাফল্য’ নিয়েই ঢাকা ছেড়েছিলেন তারানকো।
এদিকে, গতকাল নিউইয়র্কে নিয়মিত ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র ফারহান হক বলেন, বাংলাদেশে জানমালের ক্ষয়ক্ষতিতে মহাসচিব উদ্বিগ্ন। তিনি আন্তরিকভাবে এর শান্তিপূর্ণ সমাধান চান। যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম আলোর বিশেষ প্রতিনিধি এ তথ্য জানান।
বাংলাদেশ সরকার চাইছে না তারানকো ঢাকা সফর করুন— বাংলাদেশের কিছু পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত এমন খবরের বিষয়ে জানতে চাইলে ফারহান হক বলেন, তারানকোকে আবার ঢাকায় পাঠানোর কোনো পরিকল্পনা এই মুহূর্তে নেই। মহাসচিবের নির্দেশনা অনুযায়ী তিনি শুধু বাংলাদেশের সরকার ও বিরোধী দলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন এবং তিনি সে প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবেন।
Home »
সংলাপে বসুন -হাসিনা–খালেদাকে বান কি মুনের চিঠি by রাহীদ এজাজ
» সংলাপে বসুন -হাসিনা–খালেদাকে বান কি মুনের চিঠি by রাহীদ এজাজ
সংলাপে বসুন -হাসিনা–খালেদাকে বান কি মুনের চিঠি by রাহীদ এজাজ
Written By Unknown on বুধবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৫ | ৭:৩৯ AM
Related Articles
If you enjoyed this article just Click here Read Dhumketo ধূমকেতু, or subscribe to receive more great content just like it.
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন