অর্থনীতিতে নারীর
অবদান বাড়ছে
জাহাঙ্গীর শাহ | ০৮ মার্চ, ২০১৫
বাংলাদেশের অর্থনীতির
মূলধারার
কর্মক্ষেত্রগুলোতে নারীর
অবদান বেড়েই চলেছে।
বর্তমানে ১ কোটি ৬৮ লাখ
নারী কৃষি, শিল্প ও সেবা—
অর্থনীতির বৃহত্তর এই তিন
খাতে কাজ করছেন।
অর্থনীতিতে নারীর আরেকটি বড়
সাফল্য হলো, উৎপাদনব্যবস্থায়
নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে।
মূলধারার
অর্থনীতি হিসেবে স্বীকৃত
উৎপাদন খাতের মোট কর্মীর
প্রায় অর্ধেকই এখন নারী। এ
খাতে ৫০ লাখ ১৫ হাজার নারী-
পুরুষ কাজ করেন। তাঁদের
মধ্যে নারী ২২ লাখ ১৭ হাজার।
তবে নারী কর্মীদের সিংহভাগই
শ্রমজীবী। বাকিদের মধ্যে কেউ
উদ্যোক্তা, কেউ চিকিৎসক,
প্রকৌশলী। বিভিন্ন
প্রতিষ্ঠানে শীর্ষ নির্বাহী ও
উচ্চপদেও দায়িত্ব পালন করছেন
নারীরা।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান
ব্যুরোর (বিবিএস) বিভিন্ন
সমীক্ষা থেকে এসব তথ্য
পাওয়া গেছে।
অর্থনীতির ভাষায় বলা হচ্ছে, এই
নারীরা অর্থনীতির সক্রিয়
কর্মী (ইকোনমিক্যালি অ্যাকট
তাঁরা তাঁদের কাজের জন্য
মজুরি বা বেতন পান। আবার এসব
কর্মকাণ্ডে অংশ নিয়ে মূল্য
সংযোজন অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ
করছেন।
বছরে দুই লাখ নারীর
কর্মসংস্থান: ২০১০ থেকে ২০১৩—এ
তিন বছরে প্রায় ছয় লাখ নারী কাজ
পেয়েছেন। প্রতিবছর গড়ে দুই
লাখ নারী কৃষি, শিল্প ও
সেবা খাতে যুক্ত হচ্ছেন।
কর্মসংস্থান, শ্রমবাজার
নিয়ে বিবিএসের সমীক্ষার
প্রাথমিক তথ্যে দেখা গেছে,
২০১০ সালে দেশের ১ কোটি ৬২
লাখ
নারী কোনো না কোনোভাব
ছিলেন। ২০১৩
সালে এসে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১
কোটি ৬৮ লাখে।
কর্মজীবী নারীদের অর্ধেকের
বেশি কৃষিকাজের
সঙ্গে সম্পৃক্ত আছেন। বিবিএস
বলছে,
বর্তমানে কৃষি খাতে নিয়োজি
আছেন ৯০ লাখ ১১ হাজার নারী। এ
ছাড়া শিল্প ও সেবা খাতে কাজ
করেন যথাক্রমে ৪০ লাখ ৯০ হাজার
এবং ৩৭ লাখ নারী। বিবিএসের
হিসাবে, বর্তমানে প্রায় ৫
কোটি ৮০ লাখ নারী-পুরুষ
কোনো না কোনোভাবে কা
রয়েছেন। উল্লেখ্য,
সপ্তাহে কমপক্ষে এক ঘণ্টা কাজ
করেন এমন ব্যক্তিকে বেকার
হিসেবে ধরা হয় না।
শিক্ষক, নির্মাণকর্মী,
বিজ্ঞানী, ব্যাংকার,
উদ্যোক্তা, শিল্পী,
গণমাধ্যমকর্মী— প্রায় সব পেশাই
বেছে নিচ্ছেন নারী। এমনকি এখন
পেশা হিসেবে গৃহকর্মকেও
বেছে নিচ্ছেন তাঁরা।
বিবিএসের সমীক্ষায়
দেখা গেছে,
বর্তমানে দেশে স্থায়ী কিংবা
লাখ
নারী গৃহকর্মী হিসেবে কাজ
করছেন। বিনোদন ও শিল্পকর্মেই
জড়িত আছেন প্রায় নয় হাজার
নারী। এ ছাড়া ব্যাংক-বিমার
মতো আর্থিক খাতে কাজ করেন
৭০ হাজার নারী। আর
শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে নিয়
সাড়ে ছয় লাখ নারী। সেবা ও
শিল্প খাতের বিভিন্ন
প্রতিষ্ঠানে প্রধান
নির্বাহী ও উচ্চপদস্থ
কর্মকর্তা হিসেবে প্রায় পাঁচ
হাজার নারী দায়িত্ব পালন
করছেন।
কলকারখানায় পুরুষের
চেয়ে নারী শ্রমিক বেশি: উৎপাদন
খাতই যেকোনো দেশের
অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি।
শ্রমঘন এই খাতে এ দেশের নারীদের
অংশগ্রহণ বেশ উৎসাহব্যঞ্জক।
বিশেষ করে পোশাক কারখানায়
লাখ লাখ নারী কর্মী কাজ করছেন।
উৎপাদন খাত
নিয়ে সম্প্রতি প্রকাশিত
বিবিএসের এক সমীক্ষায়
দেখা গেছে, দেশের কলকারখানায়
পুরুষের চেয়ে এক লাখ
বেশি নারী শ্রমিক কাজ করেন।
বিভিন্ন কারখানায় বর্তমানে ২১
লাখ ১ হাজার ৮৩০ জন নারী শ্রমিক
রয়েছেন। পুরুষ শ্রমিকের
সংখ্যা ১৯ লাখ ৯৫ হাজার ৫৫৭ জন।
তবে একই সমীক্ষা অনুযায়ী,
শিল্পোদ্যোক্তা হিসেবে এ
দেশের মোট ২ হাজার
১৭৭টি ক্ষুদ্র, মাঝারি ও বৃহৎ
কারখানার মালিক নারী। দেশে ৪২
হাজারের
বেশি কলকারখানা রয়েছে।
বাংলাদেশ উন্নয়ন
গবেষণা প্রতিষ্ঠানের
(বিআইডিএস) গবেষণা পরিচালক
রুশিদান ইসলাম রহমান প্রথম
আলোকে বলেন, ‘একসময়
নিয়োগকারীরা শিল্পশ্রমিক
হিসেবে নারীর জোগানের
বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতেন না।
কিন্তু পোশাকশিল্পে নারীর
বিপুল অংশগ্রহণের পর থেকে অন্য
শিল্পোদ্যোক্তারাও
সহজলভ্য শ্রম
হিসেবে নারী শ্রমিক
নিয়োগের কথা ভাবতে পারছেন।
কর্মজীবী নারীরা শুধু
বাইরে কাজ করেন তা নয়।
রান্নাবান্না, শিশু পরিচর্যাসহ
গৃহস্থালির কাজও করেন। পুরুষের
চেয়ে তিন গুণ বেশি সময়
ধরে গৃহস্থালির কাজ করেন
নারীরা, কিন্তু এর জন্য
কোনো মজুরি পান না। গত বছর
প্রকাশিত বিবিএসের ‘সময় ব্যবহার’
জরিপে দেখা গেছে,
কর্মজীবী একজন পুরুষ ২৪ ঘণ্টার
মধ্যে অর্থের বিনিময়ে ৬
ঘণ্টা ৫৪ মিনিট কাজ করেন। আর
নারীরা ৫ ঘণ্টা ১২ মিনিট কাজ
করেন। তবে একজন
কর্মজীবী নারী বাসায়
এসে দৈনিক গড়ে ৩ ঘণ্টা ৩৬
মিনিট গৃহস্থালির কাজ করেন। আর
পুরুষেরা ঘরের
কাজে গড়ে মাত্র ১ ঘণ্টা ২৪
মিনিট সময় ব্যয় করেন।
কিন্তু রান্নাবান্না, সন্তান
লালন-পালনসহ গৃহস্থালির
কাজকর্মের স্বীকৃতি নেই মোট
দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি)। এই
শ্রমের আর্থিক মূল্যমানও
নির্ধারণ করা হয় না। এর
ফলে অর্থনীতিতে নারীর এ
কাজের অবদান আড়ালেই থাকছে।
বাংলাদেশে ১ কোটি ৬ লাখ
লোক গৃহস্থালির কাজ করেন।
তাঁদের সিংহভাগই নারী।
জানতে চাইলে সাবেক
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের
উপদেষ্টা ও মেট্রোপলিটন
চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড
ইন্ডাস্ট্রিজের (এমসিসিআই)
সাবেক
সভাপতি রোকিয়া আফজাল রহমান
মনে করেন, আগে মেয়েদের কাজ
করার বিষয়ে পারিবারিক
বাধা ছিল। কিন্তু এখন প্রত্যন্ত
অঞ্চল
থেকে মেয়েরা শহরে এসে কাজ
করছেন। তাঁদের বেতন-
ভাতা গ্রামে পাঠিয়ে পরিবারে
আনছেন। এতে নারীর ক্ষমতায়নের
পাশাপাশি সামাজিক পরিবর্তনও
এসেছে। তিনি বলেন,
কর্মজীবী নারীর
হাতে টাকা থাকায়
প্রসাধনসামগ্রীর
চাহিদা বেড়েছে। এ জন্য
বিপুলসংখ্যক
কারখানা তৈরি হয়েছে।
এই নারী উদ্যোক্তার অভিমত,
৯৭-৯৯ শতাংশ নারী উদ্যোক্তাই
ব্যাংক থেকে জামানতবিহীন ঋণ
নিয়ে তা পরিশোধ করেন,
যা একটি বিরাট সাফল্য।
প্রতিটি অর্থনৈতিক
অঞ্চলে নারী উদ্যোক্তাদের
জন্য আলাদাভাবে শিল্প প্লট
বরাদ্দ রাখার সুপারিশ করেন
তিনি।
Home »
অর্থনীতিতে নারীর
অবদান বাড়ছে
জাহাঙ্গীর শাহ | ০
» অর্থনীতিতে নারীর
অবদান বাড়ছে
জাহাঙ্গীর শাহ | ০
অর্থনীতিতে নারীর অবদান বাড়ছে জাহাঙ্গীর শাহ | ০
Written By Unknown on শনিবার, ৭ মার্চ, ২০১৫ | ৮:২৯ PM
Related Articles
If you enjoyed this article just Click here Read Dhumketo ধূমকেতু, or subscribe to receive more great content just like it.
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন