‘পিতা হত্যার বিচার নিয়ে সন্দিহান’ by মাহমুদ মানজুর
‘আমার বয়স যখন ৬ বছর, তখন আমার মায়ের সঙ্গে সম্পর্কের শুরু তার। এর পর গেল ১২ বছরে ক্রমে তিনি আমার বন্ধুতে, আমার নায়কে, আমার আদর্শে, বিশ্বস্ত নির্ভরতায়, আমার নাচের সংগীতে এবং আমার বাবায় পরিণত হন।’ অকাল প্রয়াত অভিজিৎ রায় সম্পর্কে এই প্রতিক্রিয়া কন্যা তৃষা আহমেদের। অভিজিৎ রায়ের অকাল মৃত্যুর পর সমপ্রতি তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে এমনটাই লিখেছেন ১৮ বছর বয়সী তৃষা। এতে তার বাবার হত্যাকারীদের বিচার হবে কিনা এ নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেছেন রাফিদা আহমেদ বন্যার প্রথম পক্ষের সন্তান তৃষা। প্রথম সংসারে বিচ্ছেদ ঘটার পর প্রায় ১৩ বছর আগে ২০০২ সালে ‘মুক্তমনা’ ব্লগসহ বিভিন্ন ব্লগে লেখালেখির সুবাদে পরিচয়-সখ্য-প্রেম হয় অভিজিৎ-বন্যার। এক বছর পর ২০০৩ সালে ছ’বছর বয়সী কন্যা তৃষাকে নিয়ে বন্যা সংসার গুছান যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়ায়। পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, অভিজিৎ-বন্যা দু’জন দুই ধর্মের হলেও তাদের বিশ্বাস ছিল মূলত মানবধর্মে। নাস্তিকতা, বিজ্ঞান এবং নিরীশ্বরবাদ নিয়ে অভিজিৎ-বন্যা দু’জনই লিখেছেন অসংখ্য ব্লগ। হিন্দু পরিবারে জন্মগ্রহণকারী অভিজিৎ নিজের সম্পর্কে বলতে গিয়ে তার এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন, ‘আমি নাস্তিক। কিন্তু আমার আশেপাশের বহু কাছের মানুষজন বন্ধু-বান্ধবই মুসলিম। তাদের উপর আমার কোন রাগ নেই, নেই কোন ঘৃণা। তাদের আনন্দের দিনে আমিও আনন্দিত হই। তাদের উপর নিপীড়ন হলে আমিও বেদনার্ত হই। প্যালেস্টাইনে বা কাশ্মীরে মুসলিম জনগোষ্ঠীর উপর অত্যাচার হলে তাদের পাশে দাঁড়াতে কার্পণ্য বোধ করি না। অতীতেও দাঁড়িয়েছি, ভবিষ্যতেও দাঁড়াবো। এটাই আমার মানবতার শিক্ষা।
এদিকে অনেকটা একই সুরে বাবার মৃত্যুর পর কন্যা তৃষা তার ফেসবুক স্ট্যটাসে লিখেছেন, ‘ইসলামী মৌলবাদীরা তাকে (অভিজিৎ) ছুরির আঘাতে হত্যা করেছে। ওই ঘটনায় আমার মা-ও গুরুতর আহত হয়ে বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। যদি বলি এই ঘটনায় আমি আতঙ্কিত বা মর্মাহত, তাহলে কম বলা হবে। পরিস্থিতি যত ‘খারাপ’ হোক না কেন পৃথিবীকে ‘ভালো’ জায়গায় পরিণত করতে ‘যুক্তির লড়াই’ শেষ হয়ে যাবে না।’ একই স্ট্যাটাসে তৃষা আরও লিখেন, ‘আমার বাবা ছিলেন একজন বিশিষ্ট লেখক। বিজ্ঞান এবং নিরীশ্বরবাদ বিষয়ে লেখার জন্য মূলত তিনি পরিচিত ছিলেন। তিনি আমাকে কখনোই প্রচলিত শান্তশিষ্ট অথবা বিনয়ী হতে বলেননি। তিনি আমাকে শিক্ষিত, উদ্যোগী এবং সাহসী হতে শিখিয়েছেন। তিনি আমাকে যা শিখিয়ে গেছেন, যে ভালবাসা দিয়ে গেছেন তা আমি সবসময় মনে রাখব। আমি তোমাকে খুবই ভালবাসি বাবা। প্রতিটি জিনিসের জন্যই তোমাকে ধন্যবাদ।’ তৃষা বলেন, ওই ঘটনাটি কেবল যুক্তরাষ্ট্রই শুনতে পারে কারণ বাংলাদেশ পাওয়ারলেস। এটি দুর্নীতিগ্রস্ত এবং সেখানে কোন আইনশৃঙ্খলা নেই। আমি গভীরভাবে সন্দিহান যে খুনিরা বিচারের আওতায় আসবে কিনা।
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক অজয় রায়ের দুই পুত্র। এর মধ্যে অভিজিৎ রায় বড়। ছোট ছেলে স্ত্রী নিয়ে ঢাকাতেই থাকেন বাবা-মা’র সঙ্গে। দুই ভাই-ই অসম্ভব মেধাবী ছিলেন শিক্ষা জীবনে। অভিজিৎ এর মা দীর্ঘদিন ধরে পেরালাইসিস রোগে আক্রান্ত হয়ে শয্যাশায়ী। এদিকে অভিজিৎ-এর নৃশংস হত্যাকাণ্ড এবং বন্যার আহত হওয়ার বিচার চেয়ে প্রথম থেকেই মিডিয়ায় বেশ সোচ্চার ভূমিকা পালন করে আসছেন শিক্ষাবিদ অজয় রায়। তবে এর বাইরে বন্যার পরিবারের কোন সদস্যকে খুঁজে পাওয়া যায়নি এ পর্যন্ত।
অভিজিৎ-বন্যা দম্পতির ঘনিষ্ঠ বন্ধু শুদ্ধ স্বর প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী আহমেদ রশিদ টুটুল বলেন অভিজিৎ-বন্যা দু’জনই আমার ভাল বন্ধু। আমাদের সঙ্গে পরিচয় ব্লগে লেখালেখির মধ্য দিয়ে। সত্যি বলতে আমরা সারাক্ষণ তর্ক-বিতর্কে মেতে থাকতাম নিজেদের বিশ্বাস-অবিশ্বাস নিয়ে। আড্ডায়-ফোনে-ব্লগে আমরা লেখালেখির মধ্যে ডুবে থাকতাম। যার ফলে পারিবারিক বিষয়গুলো নিয়ে আগ্রহ প্রকাশের সুযোগ থাকতো না। বন্ধু হিসেবে আমার কাছে এটুকু স্পষ্ট ছিল, ওরা দু’জন সংসার জীবনে খুব সুখে ছিল। মানুষ হিসেবে দু’জনই অসম্ভব সাদা মনের। দু’জনই অসম্ভব মেধাবী। ওদের ব্যক্তিগত বিষয়ে আমার জানার আগ্রহ কিংবা পরিধি এটুকুই। এদিকে একই তথ্য জানতে কথা হয় ব্লগার অ্যান্ড অনলাইন এক্টিভিস্ট নেটওয়ার্কের বর্তমান সভাপতি অনিমেষ রহমানের সঙ্গে। তিনিও খানিক এড়িয়ে গিয়ে একই কথা বলেন। অন্যদিকে, বাবার নৃশংস মৃত্যু আর আহত মা রাফিদা আহমেদ বন্যার খবর পেয়ে গতকাল পর্যন্ত তৃষা ঢাকায় আসেননি। একাধিক সূত্র জানায়, নিরাপত্তাহীনতার কথা বিবেচনা করেই পারিবারিক সিদ্ধান্তে তৃষাকে ঢাকায় আসতে বারণ করা হয়েছে। অন্যদিকে অভিজিতের ফেসবুক একাউন্ট খোলা থাকলেও সেটি এখন অপারেট করছেন অন্য কেউ। যার ফলে ওই একাউন্টের নাম বদলে লেখা আছে ‘রিমেম্বরিং অভিজিৎ রায়’। এই একাউন্টে ২৬শে ফেব্রুয়ারির পর আর কোন নতুন পোস্ট নেই।
প্রকৌশলী অভিজিৎ রায় যুক্তরাষ্ট্রের একটি সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন। এসএসসি ও এইচএসসি পাসের পর ১৯৯০ সালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) ভর্তি হন অভিজিৎ। যন্ত্র প্রকৌশলে লেখাপড়ার পর কর্মজীবন শুরু করেন অটবিতে। চাকরিরত অবস্থায় বৃত্তি নিয়ে পিএইচডি করতে সিঙ্গাপুরে যান অভিজিৎ। পরে পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানে তিনি জিপিএস প্রযুক্তির গবেষণায় যুক্ত ছিলেন। অভিজিতের লেখা এক ডজন বই প্রকাশ পেয়েছে। অন্যদিকে অভিজিতের স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যা (৩৫) নিয়মিত ব্লগে লেখার পাশাপাশি এনালাইসিস্ট হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের একটি তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। একমাত্র কন্যা তৃষা আহমেদ (১৮) লেখাপড়া করেন সেখানে। ‘এ’ লেভেল শেষ করার পর সমপ্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছেন তিনি।
Posted 24 minutes ago by Kutubi Coxsbazar
Labels: আইন আদালত
Home »
পিতা হত্যার বিচার নিয়ে সন্দিহান’ by মাহমুদ মানজুর
» পিতা হত্যার বিচার নিয়ে সন্দিহান’ by মাহমুদ মানজুর
পিতা হত্যার বিচার নিয়ে সন্দিহান’ by মাহমুদ মানজুর
Written By Unknown on মঙ্গলবার, ৩ মার্চ, ২০১৫ | ৩:৫৭ AM
Related Articles
If you enjoyed this article just Click here Read Dhumketo ধূমকেতু, or subscribe to receive more great content just like it.
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন