রোগ নিরাময়ে গাছের
উপকারিতা
ডেস্ক : আমাদের
চারপাশে বিভিন্ন ধরনের উদ্ভিদ
রয়েছে। এর প্রায় সকলই মানুষের
কল্যানে সৃষ্টি। কিন্তু কোন
উদ্ভিদে কি গুন তা আমরা সবাই
জানি না।
প্রত্যকটি ভেজষ উদ্ভিদেরই কিছু
না কিছু ঔষধী গুন রয়েছে।
বাংলাদেশে প্রায় পাঁচ হাজার
উদ্ভিদ রয়েছে। এর
মধ্যে রয়েছে সাড়ে পাঁচ শ
ঔষধি উদ্ভিদ প্রজাতি বা ভেষজ।
ঔষুধ শিল্পের কাঁচামাল
হিসেবে ভেষজ উদ্ভিদের
চাহিদা সারা বিশ্বের
মতো আমাদের দেশে ক্রমেই
বেড়ে চলেছে। ইউনানি, আয়ুর্বেদ
ও হোমিওপ্যাথি ওষুধ
উৎপাদনে কাঁচামাল
হিসেবে ব্যবহারের
পাশাপাশি বিউটি পার্লার ও
প্রসাধনীতে এখন প্রচুর ভেষজ
উপাদান ব্যবহৃত হচ্ছে।
বাংলাদেশে স্বল্পসময়ে কম
জমিতে অধিক হারে উৎপাদন
করে অধিক মুনাফা অর্জন
করা সম্ভব_এমন ঔষধি রয়েছে ২৫টির
মতো। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য
হচ্ছে_পুদিনা, ঘৃতকুমারী, থানকুনি,
অর্জুন, আমলকী, হরীতকী, কালমেঘ,
নিম, বহেড়া, কালিজিরা, বসাক,
উলটকমল, অশ্বগন্ধা, সর্পগন্ধা, তুলসী,
মেথি, সোনাপাতা, যষ্টিমধু,
বাবলা, শতমূলী, ইসবগুল, আদা, রসুন,
হলুদ, পিঁয়াজ ইত্যাদি।
নীচে কিছু ভেজষ উদ্ভিদের
ঔষধী গুনাগন তুলে ধরা হলো:
বাসক:
বাসক একটি ভারত উপমহাদেশীয়
ভেষজ উদ্ভিদ। আর্দ্র,
সমতলভূমিতে এটি বেশী জন্মে।
লোকালয়ের কাছেই
জন্মে বেশী।
হালকা হলুদে রংয়ের
ডালপালায়ক্ত ১ থেকে ২ মি. উঁচু
গাছ, ঋতুভেদে সর্ব্বদাই প্রায় সবুজ
থাকে। বল্লমাকারের পাতা বেশ
বড়। ফুল ঘন, ছোট স্পাইকের ওপর
ফোটে। স্পাইকের বৃন্ত পাতার
চেয়ে ছোট। স্পাইকের ওপর পাতার
আকারে উপপত্র থাকে যার
গায়ে ঘন
এবং মোটা শিরা থাকে। ফুলের
দল (কোরোল্লা বা পত্রমূলাবর্ত)
সাদা বর্ণ। তার ওপর বেগুনী দাগ
থাকে। ফল সুপারি আকৃতির;
বীজে ভর্তি।
প্রাচীনকাল থেকেই
বাংলাদেশে রোগ
নিরাময়ে গাছ-গাছালির পাতা,
শেকড় বা ছাল ব্যবহার করা হতো।
সেসব গাছই ছিল আমাদের
পূর্বপুরম্নষদের জীবন সাথী। এখনও
বাংলার গ্রামে অনেকেই রোগ
নিরাময়ে গাছের রস,
পাতা বা ছাল ব্যবহার
করে থাকেন। সে রকম
দুটি গুণী গাছের কথা এবার
জানানো হলো :
বাসক
একটা সময় ছিল যখন বাঙালীর
জীবনে হরীতকী, আমলকি, চিরতা,
বাসকই ছিল বেঁচে থাকার রসদ।
সুস্থতার চাবিকাঠি।
আটপৌরে লোকের
মুখে ঘুরে ঘুরে বাসকের নাম
পরিণত হয়েছিল ‘বসায়।’ বাসক
শব্দটির অর্থ সুগন্ধকারক, যদিও তার
সঙ্গে এই উদ্ভিতটির কোন সাযুজ্য
খুঁজে পাওয় যায় না।
তবে দুর্গন্ধনাশক চর্মশোধক
হিসেবে এর ব্যবহার
সেকালে বাংলাদেশে ছিল।
এখনও
মনোহারি দোকানে শুকনো বাসক
পাতা বিক্রি হয়।
ছোটখাটো দৈহিক কষ্ট লাঘবের
জন্যই এর ব্যবহার স্বীকৃত।
কি করে চিনবেন
বাসক মাঝারি মাপের গাছ। গাঢ়
সবুজ রঙের উদ্ভিদ এবং চেহারায়
তেমন কোন বিশেষত্ব নেই। ৫-৬ ফুট
পর্যনত্ম সাধারণত লম্বা হয়
এবং বাংলাদেশের সর্বত্রই
মেলে। আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে ছোট
ছোট সাদা ফুল ফোটে। অন্য এক
প্রকার বাসক গাছও
আছে যাতে হলদেটে লাল রঙের
ফুল ধরে।
কি করে গাছ বসাবেন
বাসক গাছ
ঔষধি বাজারে বা নার্সারিতেও
পেতে পারেন। তবে এ গাছ দুর্লভ
নয়।
পাতা ইত্যাদি চেনা থাকলে সহজেই
নিজে সংগ্রহ করে নেয়া সম্ভব।
গাছ বসাতে সাধারণ দোঅাঁশ
মাটি ব্যবহার করম্নন। একটু বড়
মাপের টব নিন।
পরীৰা করে নেবেন যাতে টবের
তলদেশের কেন্দ্রের ফুটোটি বেশ
বড় মাপের হয়। তলার
দিকে সামান্য
খোলামকুচি বসিয়ে টবটি দোঅাঁশ
মাটি, গোবর এবং পাতাসারের
মিশ্রণ দিয়ে ভরাট করম্নন। গাছের
ডাল
কেটে যদি বর্ষাকালে পুঁতে দিতে পারেন
তাহলে সহজেই
তা থেকে চারাগাছ হয়ে যাবে।
যত্ন
বাসক গাছ প্রায় অযত্নে লালিত
গাছ। কেবল মনে করে রোজ
বিকেলের দিকে একটু
পানি দিতে হবে। লৰ্য
রাখতে হবে যাতে টবের কানায়
অর্থাৎ গাছের গোড়ায়
পানি না জমে থাকে। রোদ,
পানি, বাতাস ঠিকমত
পেলে কিছুদিনের মধ্যেই বেশ
ঝাঁকাল
চেহারা নেবে বাসকগাছটি। তখন
সামান্য ছেঁটে ছেঁটে ক্রমশ
একটা দৃষ্টিনন্দন অবয়ব তৈরির
চেষ্টা করা যেতে পারে।
ব্যবহার
বাসকের উপকারিতা বলে শেষ
করা যায় না। এর
মধ্যে একটি তো সবাই জানে।
শিশুর
পেটে কৃমি থাকলে বাসকের
ছালের কাথ খাওয়ালে এর উগ্র
তিক্ত স্বাদ কৃমি বের করে দেয়।
যাদের হাঁপের টান
আছে তারা বাসক
পাতা শুকানো করে, ওই
পাতা বিড়ি বা চুরম্নট জাতীয়
পাকিয়ে তার সাহায্যে ধূমপান
করলে শ্বাসকষ্ট প্রশমিত হয়। যাদের
গায়ে ঘামের গন্ধ হয় তারা বাসক
পাতার রস গায়ে লাগালে দুর্গন্ধ
দূর হবে। এবার একটা কসমেটিক
টিপস দিই-যারা বিধাতার
দেয়া গায়ের রঙকে মন
থেকে মেনে নিতে পারেন না,
তারা রঙ
ফর্সা করতে চাইলে বাসকই তার
বন্ধু। বাসক পাতার রস ও দুটিপ
শঙ্খচূর্ণ নিয়মিত মাখুন,
বৈদ্যরা লিখে গেছেন রঙ
ফর্সা হবেই।
আজকাল বড় সমস্যা পানি দূষণ।
এমনকি অনেক বাজার
চলতি ফিল্টারও
নাকি পানিকে সম্পূর্ণ জীবাণু
মুক্ত করতে পারে না। কী দরকার
ফিল্টারের? এক
কলসি পানিতে ৩-৪টি বাসক
পাতা ফেলে ৩-৪
ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখার পর সেই
পানি ব্যবহার করলেই হলো।
জীবাণু উধাও। শুনলে আশ্চর্য হবেন,
এই কয়েক দশক
আগে বসনত্মকালে সংক্রমণের
আক্রমণ এড়াতে,
পুকুরে পুকুরে জমিদারেরা বাসক
পাতা ফেলতেন। বাসকের
সাহায্যে পানি শুদ্ধিকরণ ছিল
সমাজকল্যাণের অঙ্গ।
আমরম্নল
‘আমরম্নল’ আমাদের দেশে শাক
নামেই পরিচিত। এটা লৌকিক
নাম। মূল নাম হলো চাঙ্গেরি।
মনে হয় মূল নামটি প্রাক-আর্য কোন
শব্দ থেকে উৎপন্ন। বাংলাদেশের
বহু গ্রামেই অজ্ঞাতে,
অস্থানে আমরম্নল জন্মায়। মুখ্যত
তিনটি প্রজাতির গাছই
বেশি দেখা যায়।
কি করে চিনবেন
বাংলাদেশের প্রায় সর্বত্রই এই
শাক জন্মায়। মাটির বুক
বেয়ে ওঠে ছোট ছোট উদ্ভিদ,
চেহারায় সরম্ন এবং লতানো।
অনেক সময় শুষনি শাকের
সঙ্গে গুলিয়ে যায়। শুষনির ডাঁটির
মাথায় থাকে। দুটি পাতা, কিন্তু
আমরম্নলের তিনটি।
শুষনি স্বাদে টক নয়, কিন্তু আমরম্নল
তিক্ত; কষায় স্বাদযুক্ত।
ডাঁটাগুলো ৩-৪ ইঞ্চি লম্বা হয়।
চওড়ায় মোটা সুতোর মতো। ডাঁটার
গোড়া থেকে ফুল বের হয়। ছোট হলুদ
রঙের ফুল। সেপ্টেম্বর-অক্টোবর
মাসে ফুল ও ফল হয়।
কি করে গাছ বসাবেন
আমরম্নল নেহাতই বুনো গাছ। প্রায়শই
দেখা যায়, পোড়ো জমি ও বাড়ির
আনাচে-কানাচে আমরম্নল
ফলে আছে। ছোট ছোট যবের
মতো ফল ধরে, যার
ভেতরে থাকে বহুসংখ্যক বীজ।
সেই বীজ
ছড়িয়ে বা সরাসরি লতা বসিয়ে চওড়া,
চ্যাটালো পাত্রে গাছ করম্নন।
প্রচুর আলো- হাওয়াযুক্ত বারান্দায়
হ্যাংগিং পস্ন্যান্ট হিসেবেও
আমরম্নল রাখতে পাবেন।
দেখতে ভালই লাগবে। আর সেরকম
কোন যত্নেরই প্রয়োজন হয় না।
নিয়মিত পানিটুকু দিলেই হলো।
আর মাটি জমি থেকে তুলে নিন।
ব্যবহার
বাচ্চাদের বুকে মাঝে মাঝেই
এমনভাবে সর্দি বসে যায় যে বহু
চেষ্টাতেও বুক পরিষ্কার হয় না।
সঙ্গে যদি কাশিও থাকে,
তবে একবেলা অথবা প্রয়োজনবোধে দুবেলা আমরম্নলের
রস এক চা চামচ পরিমাণে সামান্য
গরম করে শিশুকে খাওয়ালে দ্রম্নত
উপকার পাওয়া যায়। বসা সর্দিও
উঠে আসে। অনেকে অবশ্য সরষের
তেলে আমরম্নলের রস মিশিয়ে গরম
করে বা রোদে তাতিয়ে নিয়ে শিশুর
বুকে-পিঠে মালিশ করেন। এটিও
স্বীকৃত পন্থা। অনেক সময়
কটিদেশে হাড়ের ব্যথা হয়
সে ৰেত্রে আমরম্নল শাকের রস একটু
গরম করে দুবেলা দু’চামচ
করে খেলে দ্রম্নত উপকার
পাওয়া যায়। তবে আমরম্নলের
শ্রেষ্ঠ ব্যবহার অমস্নপিত্ত
বা অম্বলের উপশমে।
টক ছুঁতে যারা ভয় পান, তারাও
নির্ভয়ে আমরম্নল শাক
খেতে পারেন, পেট সুস্থ রাখার এ
এক আশ্চর্য দাওয়াই।
বাসকের ঔষধী গুণ:
তাজা অথবা শুকানো পাতা ওষুধের
কাজে লাগে। বাসকের পাতায়
“ভাসিসিন” নামীর ক্ষারীয়
পদার্থ এবং তেল থাকে।
শ্বাসনালীর
লালাগ্রন্থিকে সক্রিয়
করে বলে বাসক শ্লেষ্মানাশক
হিসেবে প্রসিদ্ধ । বাসক পাতার
নির্যাস, রস বা সিরাপ
শ্লেষ্মা তরল
করে নির্গমে সুবিধা ক’রে দেয়
বলে সর্দি,
কাশি এবং শ্বাসনালীর
প্রদাহমূলক ব্যাধিতে বিশেষ
উপকারী। তবে অধিক মাত্রায়
খেলে বমি হয়, অন্তত: বমির ভাব
বা নসিয়া হয়, অস্বস্তি হয়।
বৈজ্ঞানিক পরীক্ষায় বাসকের
ভেষজ গুণাবলি প্রমাণিত হয়েছে।
এর মূল, পাতা, ফুল, ছাল সবই ব্যবহার
হয়।
প্রয়োগ:
১. বাসক পাতার রস ১-২ চামচ হাফ
থেকে এক চামচ মধুসহ খেলে শিশুর
সদির্কাশি উপকার পাওয়া যায়।
২. বাসক পাতার রস স্নানের আধ
ঘন্টা আগে মাথায় কয়েকদিন
মাখলে উকুন মরে যায়। আমবাত ও
ব্রণশোথে (ফোঁড়ার প্রাথমিক
অবস্থা) বাসক
পাতা বেটে প্রলেপ
দিলে ফোলা ও ব্যথা কমে যায়।
৩. যদি বুকে কফ
জমে থাকে এবং তার
জন্যে শ্বাসকষ্ট
হলে বা কাশি হলে বাসক পাতার
রস ১-২ চামচ এবং কন্টিকারীরস ১-২
চামচ, ১ চামচ মধুসহ খেলে কফ
সহজে বেরিয়ে আসে।
৪. প্রস্রাবে জ্বালা-
যন্ত্রনা থাকলে বাসকের ফুল
বেটে ২-৩ চামচ মিছরি ১-২ চামচ
সরবত করে খেলে এই
রোগে উপকার পাওয়া যায়।
৫. জ্বর হলে বা অল্প জ্বর
থাকলে বাসকের মূল ৫-১০ গ্রাম
ধুয়ে থেঁতো করে ১০০
মিলি লিটার
জলে ফোটাতে হবে।
৬. ২৫ মিলি লিটার
থাকতে নামিয়ে তা ছেঁকে নিয়ে দিনে ২
বার করে খেলে জ্বর
এবং কাশি দুইই চলে যায়।
৭. বাসকের কচিপাতা ১০-১২ টি এক
টুকরো হলুদ একসঙ্গে বেটে দাদ
বা চুলকানিতে লাগলে কয়েকদিনের
মধ্যে তা সেরে যায়।
৮. বাসকপাতা বা ফুলের রস ১-২
চামচ মধু বা চিনি ১চামচসহ
প্রতিদিন খেলে জন্ডিস
রেগে উপকার পাওয়া যায়।
৯. পাইরিয়া বা দাঁতের
মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়লে বাসক
পাতা ২০ টি থেঁতো করে ২ কাপ
জলে সিদ্ধ করে ১ কাপ
থাকতে নামিয়ে ঈষদুষ্ণ অবস্থায়
কুলকুচি করলে এই রোগে উপকার
পাওয়া যায়।
ভেষজ দাওয়াই:
* শিশুর
পেটে কৃমি থাকলে বাসকের
ছালের ক্বাথ খাওয়ালে এর উগ্র
তিক্ত স্বাদ কৃমি বের হয়ে যায়।
* যাদের হাঁপানির টান
আছে তারা বাসক
পাতা শুকনো করে, ওই
পাতা বিড়ি বা চুরুটের
মতো পাকিয়ে এর
সাহায্যে ধূমপান করলে শ্বাসকষ্ট
প্রশমিত হয়।
* যাদের গায়ে ঘামের গন্ধ হয়
তারা বাসক পাতার রস
গায়ে লাগালে দুর্গন্ধ দূর হবে।
*বাসকপাতার রস ও শঙ্খচূর্ণ
মিশিয়ে নিয়মিত ব্যবহার
করলে রং ফরসা হবে।
* এক কলসি পানিতে তিন-
চারটি বাসকপাতা ফেলে তিন-
চার ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখার পর
সেই পানি বিশুদ্ধ হয়ে যায়। এরপর
ব্যবহার করতে পারেন।
* পাতার রস নিয়মিত
খেলে খিঁচুনি রোগ দূর হয়ে যায়।
* বাসক পাতার রস মাথায়
লাগালের উকুন চলে যায়।
* বাসক পাতা বা ফুলের রস এক
বা দুই চামচ মধু
বা চিনি দিয়ে খেলে জন্ডিস
ভালো হয়।
* শরীরে দাদ থাকলে বাসক
পাতার রস
লাগালে ভালো হয়ে যায়।
অন্যান্য উপকারিতা:
বাসকের পাতা সবুজ খাদ্য
হিসেবে ব্যবহৃত হয়
এবং পাতা থেকে হলদে রং পাওয়া যায়।
বাসক পাতায় এমন কিছু ক্ষারীয়
পদার্থ আছে যায় ফলে ছত্রাক
জন্মায় না এবং পোকামাকড়
ধরে না বলে ফল
প্যাকিং এবং সংরক্ষণ করার
কাজে ব্যবহৃত হয়। পাতায় কিছু দুর্গন্ধ
আছে বলে পগুরা মুখ দেয় না। সেই
কারণে চাষ আবাদের জন্য
জমি উদ্ধারের কাজে বাসকের
পাতা বিশেষ উপকারী।
তেলাকুচা
তেলাকুচা একপ্রকারের ভেষজ
উদ্ভিদ।
বাংলাদেশে স্থানীয়ভাবে একে ‘কুচিলা’,
তেলা, তেলাকচু, তেলাহচি,
তেলাচোরা কেলাকচু,
তেলাকুচা বিম্বী ইত্যাদি নামে ডাকা হয়।
অনেক
অঞ্চলে এটি সবজি হিসেবে খাওয়া হয়।
গাছটির ভেষজ ব্যবহারের জন্য এর
পাতা, লতা, মূল ও ফল ব্যবহৃত হয়।
এটি লতানো উদ্ভিদ। এটি গাঢ় সবুজ
রঙের নরম পাতা ও কাণ্ডবিশিষ্ট
একটি লতাজাতীয়
বহুবর্ষজীবী উদ্ভিদ। লতার কাণ্ড
থেকে আকশীর সাহায্যে অন্য
গাছকে জড়িয়ে উপরে উঠে।
পঞ্চভূজ আকারের পাতা গজায়,
পাতা ও লতার রং সবুজ। এর ফল ও
কচি ডগা খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়
সেখানে। তেলাকুচায় প্রচুর
বিটা-ক্যারোটিন আছে।
ঔষধি গুণাগুণ:
তেলাকুচা ফলে আছে ‘মাস্ট সেল
স্টেবিলাইজিং’,
‘এনাফাইলেকটিক-রোধী’
এবং ‘এন্টিহিস্টামিন’ জাতীয়
উপাদান। কবিরাজী চিকিৎসায়
তেলাকুচা বেশ কিছু রোগে ব্যবহৃত
হয়, যেমন- কুষ্ঠ, জ্বর, ডায়াবেটিস,
শোথ (edema), হাঁপানি,
ব্রংকাইটিস ও জন্ডিস।
কালমেঘ
কালমেঘ একটি ভেষজ উদ্ভিদ। ১
সে.মি. লম্বা ফুলের
রং গোলাপী। দেড় থেকে দু
সে.মি. লম্বা ফল
অনেকটা চিলগোজার মতন
দেখতে।শিকড় ব্যতীত কালমেঘ
গাছটির সব অংশই ঔষুধের
কাজে লাগে। কালমেঘ অত্যন্ত
তেতো এবং পুষ্টিকর। মানব
দেহের
রোগপ্রতিরোধী শক্তি বৃদ্ধি করে।
জ্বর, কৃমি, আমাশয়, সাধারণ
শারীরিক দুর্বলতা এবং বায়ু
আধিক্যে কালমেঘ অত্যন্ত
উপকারী।
শিশুদের যকৃৎ রোগে এবং হজমের
সমস্যায় কালমেঘ ফলপ্রদ।
কালমেঘের
পাতা থেকে তৈরী আলুই পশ্চিম
বাংলার ঘরোয়া ঔষুধ যা পেটের
অসুখে শিশুদের দেওয়া হয়।
টাইফয়েড
রোগে এবং জীবানুরোধে কালমেঘ
কার্য্করী। সাধারণ একটা বিশ্বাস
ছিল যে সাপের কামড়ে কালমেঘ
খুব উপকারী।
পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে কথাটা ভুল।
কোথাও কোথাও কালমেঘ গাছ
বেটে সরষের
তেলে চুবিয়ে নিয়ে চুলকানিতে লাগানো হয়।
গাছের পাতার রস কোষ্ঠকাঠিন্য
ও লিভার রোগের প্রতিষেধক
হিসেবে কাজ করে।
কালমেঘ গাছের পাতার রস জ্বর,
কৃমি, অজীর্ণ, লিভার
প্রভৃতি রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত
হয়। কোষ্ঠকাঠিন্য হলে পাতার রস
মধুর সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়ানো হয়।
পার্বত্য চট্টগ্রামের
আদিবাসীরা শিশুদের বদহজম ও
লিভারের সমস্যায় প্রাচীনকাল
থেকে এটি ব্যবহার করছে। এ
গাছের রস রক্ত পরিষ্কারক,
পাকস্থলী ও যকৃতের শক্তিবর্ধক ও
রেচক হিসেবেও কাজ করে। আবার
এ গাছের পাতা সিদ্ধ
করে ক্ষতস্থানে লাগিয়ে দিলে ঘা-
পাঁচড়া জাতীয় রোগ দূর হয়
বলে আদিবাসীদের বিশ্বাস।
অর্জুন:
ঔষধি গুন :
ভেষজশাত্রে ঔষধি গাছ
হিসাবে আর্জুনের ব্যবহার অগনিত।
বলা হয়ে থাকে,
বাড়িতে একটি অর্জুন গাছ
থাকা আর এক জন ডাক্তার
থাকা একই কথা।এর ঔষধি গুন
মানবসমাজের দৃষ্টি আকর্ষন
করেছে সুপ্রাচীন কাল থেকেই।
শরীরের বল
ফিরিয়ে আনা এবং রণাঙ্গনে মনকে উজ্জীবিত
রাখতে অর্জুন ব্যবহারের উল্লেখ
রয়েছে মহাভারত ও বেদ-
সংহিতায়।তার পর যত দিন
যাচ্ছে ততই অর্জুনের উপকারী দিক
উদ্ভাবিত হচ্ছে।
* যাদের বুক ধড়ফড় করে অথচ উচ্চ
রাক্তচাপ নাই, তাদের পক্ষে অর্জুন
ছাল কাঁচা হলে ১০-১২ গ্রাম,
শুকনা হলে ৫-৬ গ্রাম একটু
ছেঁচে ২৫০ মিলি দুধ ও ৫০০
মি লি জল এর
সাথে মিশিয়ে জ্বাল
দিয়ে আনুমানিক ১২৫
মিলি থাকতে ছেঁকে বিকেলবেলা খেলে বুক
ধড়ফড়ানি কমে যায়।
তবে পেটে যাতে বায়ু
না থাকে সেদিকে খেয়াল
রাখতে হবে।
* অর্জুন ছাল
বেটে খেলে হৃৎপিন্ডের
পেশি শক্তিশালী হয়, হৃৎপিন্ডের
ক্ষমতা বাড়ে।এটি রক্তের
কোলেষ্টরল কমায় এবং ফলত
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে থাকে।
* বিচুর্ণ ফল মূত্রবর্ধক হিসেবে কাজ
করে এবং লিভারসিরোসিসের
টনিক হিসাবে ব্যাবহৃত হয়।
* অর্জুনের ছালে ট্যানিন রয়েছে,
এ টানিন মুখ,জিহ্বা ও মাড়ীর
প্রদাহের চিকিৎসায় ব্যাবহার হয়।
এটি মাঢ়ীঢ় রক্তপাত বন্ধ
করে এবং শরীরে ক্ষত, খোস
পাঁচড়া দেখা দিলে অর্জুনের
ছাল বেটে লাগালে সেরে যায়।
* অর্জুনের ছাল হাঁপানি, আমাশয়,
ঋতুস্রাবজনিত সমস্যা, ব্যথ্যা ,প্রদর
ইত্যাদি চিকিৎসায়ও উপকারী।
* এটি সংকোচ ও জ্বর নিবারক
হিসাবেও কাজ করে।
* এ ছাড়া অর্জুনে saponin রয়েছে,
একটি যৌন উদ্দীপনা বাড়ায়।তাই
চর্ম ও যৌন রোগে অর্জুন ব্যাবহ্রত
হয়।যৌন উদ্দীপনা বাড়াতেও
অর্জুনের ছালের রস ব্যাবহার হয়।
* অর্জুনের ছালে essential oil
রয়েছে তাই অর্জুন খাদ্যা হজম
ক্ষমতা বাড়ায়।খাদ্যাতন্ত্রের
ক্রিয়া স্বভাবিক রাখতে সাহায্য
করে।
* ক্যান্সার কোষের বর্ধন
রোধকারী gallic acid,ethy gallae ও
lutenolin রয়েছে অর্জুন ছালে। এ
কারনে এটি ক্যান্সার চিকিৎসায়
ব্যাহারের সুযোগ রয়েছে।
ভেষজ শাস্ত্রে ঔষধি গাছ
হিসেবে অর্জুনের ব্যবহার অগণিত।
বলা হয়ে থাকে,
বাড়িতে একটি অর্জুন গাছ
থাকা আর একজন চিকিৎসক
থাকা একই কথা। এর ঔষধি গুণ মানব
সমাজের দৃষ্টি আকর্ষণ
করেছে সুপ্রাচীন কাল থেকেই।
শারীরিক বল
ফিরিয়ে আনা এবং রণাঙ্গনে মনকে উজ্জীবত
করার ভেষজ রস হিসেবে অর্জুন
ব্যবহারের উল্লেখ
রয়েছে মহাভারত ও বেদ-
সংহিতায়। তারপর যতদিন
যাচ্ছে অর্জুনের উপকারী দিক ততই
উদ্ভাসিত হচ্ছে। অর্জুন এমনি এক
ধরনের ভেষজ উদ্ভিদ যা মানব
কল্যাণে ব্যবহৃত হচ্ছে বহু যুগ ধরে।
এটি কমব্রিটেসি গোত্রের
অন্তর্ভুক্ত। এ গাছটির বৈজ্ঞানিক
নাম Terminalia arjuna , সংস্কৃত নাম
ককুভ।
বৃহদাকৃতির বহুবর্ষজীবী এই
উদ্ভিদটি প্রায় ১৮-২৫ মিটার
উচ্চতা বিশিষ্ট হয়ে থাকে।
গাছটির
মাথা ছড়ানো ডালগুলো নীচের
দিকে ঝুলানো থাকে।
পাতা দেখতে অনেকটা মানুষের
জিহবাকৃতির। ছাল খুব
মোটা এবং ধূসর বর্ণের। গাছ
থেকে সহজেই ছাল উঠানো যায়।
ফল দেখতে কামরাঙ্গার মত, পাঁচ
খাঁজ বিশিষ্ট কিন্তু
আকৃতিতে অনেক ছোট। শীতের
শেষেই সাধারণত গাছ নিষ্পত্র
হয়ে যায় এবং বসন্তে নতুন পাতায়
গাছ ভরে যায়। নতুন
পাতা গজানোর সময়েই গাছের
শাখাগুলো পুষ্পমঞ্জরিতে ভরে ওঠে।
নিম্মে অর্জুনের কিছু
উপকারী দিক বর্ণনা করা হলো-
হৃদরোগ:
অর্জুনের প্রধান ব্যবহার হৃদরোগে।
অর্জুন ছালের রস কো-এনজাইম
কিউ-১০ সমৃদ্ধ। এই কো-এনজাইম
কিউ-১০ হৃদরোগ এবং হার্ট অ্যাটাক
প্রতিরোধ করে। বাকলের রস ব্লাড
প্রেসার এবং কোলেস্টেরল
লেভেল কমায়। অর্জুনের ছাল
বেটে রস খেলে হৃদপিন্ডের
পেশি শক্তিশালী হয়
এবং হৃদযন্ত্রের ক্ষমতা বাড়ে।
বাকলের ঘন রস দুধের
সাথে মিশিয়ে প্রতিদিন
সকালে খালি পেটে খেতে হবে।
বাকলে রস
না থাকলে শুকনো বাকলের
গুঁড়া ১-২ গ্রাম দুধের
সাথে মিশিয়ে সকালে খালি পেটে খেতে হবে।
অ্যাজমা:
অর্জুন ছালের পাউডার ১২ গ্রাম
দুধের ক্ষীর বা পায়েসের
সাথে মিশিয়ে খেলে অ্যাজমা আক্রান্ত
ব্যক্তির অ্যাজমা রোগের
স্থায়ী সমাধান হবে।
ক্ষয়কাশে:
অর্জুন ছালের গুঁড়া, বাসক পাতার
রসে ভিজিয়ে শুকিয়ে রাখতেন
প্রাচীন বৈদ্যেরা।
দমকা কাশি হতে থাকলে একটু
ঘি ও মধু বা মিছরির
গুঁড়া মিশিয়ে খেতে দিতেন।
এতে কাশির উপকার হতো।
হাড় মচকে গেলে বা চিড় খেলে:
অর্জুন ছাল ও রসুন বেটে অল্প গরম
করে মচকানো জায়গায়
লাগিয়ে বেঁধে রাখলে সেরে যায়।
তবে সেই সাথে অর্জুন ছালের চূর্ণ
২-৩ গ্রাম মাত্রায় আধা চামচ ঘি ও
সিকি কাপ দুধ মিশিয়ে অথবা শুধু
দুধ মিশিয়ে খেলে আরও
ভালো হয়।
ত্বকের পরিচর্যা:
ত্বকে ব্রণের ক্ষেত্রে অর্জুন
গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ছালের চূর্ণ মধুর
সাথে মিশিয়ে ব্রণের উপর
লাগালে খুব দ্রুত উপকার হয়।
এছাড়া ছালের মিহি গুঁড়া মধু
মিশিয়ে লাগালে মেচতার দাগ
দূর হয়।
বুক ধড়ফড়:
যাদের বুক ধড়ফড় করে অথচ উচ্চ
রক্তচাপ নেই, তাদের পক্ষে অর্জুন
ছাল কাঁচা হলে ১০-১২ গ্রাম,
শুকনা হলে ৫-৬ গ্রাম একটু
ছেঁচে ২৫০ মিলি দুধ ও ৫০০
মিলি পানির
সাথে মিশিয়ে জ্বাল
দিয়ে আনুমানিক ১২৫
মিলি থাকতে ছেঁকে বিকাল
বেলা খেলে বুক ধড়ফড়ানি অবশ্যই
কমবে। তবে পেটে যেন বায়ু
না থাকে সেদিকে খেয়াল
রাখতে হবে। লো-ব্লাড
প্রেসারে উপযুক্ত
নিয়মে তৈরি করে খেলেও অবশ্য
প্রেসার বাড়বে।
রক্তপিত্তে:
মাঝে মাঝে কারণে বা অকারণে রক্ত
ওঠে বা পড়ে। সেক্ষেত্রে ৪-৫
গ্রাম ছাল
রাত্রিতে পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে ছেঁকে নিয়ে পানিটা খেলে উপকার
পাওয়া যায়।
ফোঁড়া:
ফোঁড়া হলে পাতা দিয়ে ঢেকে রাখলে ফোঁড়া ফেটে যায়,
তারপর পাতার রস
দিলে তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যায়।
ক্ষত বা ঘা:
শরীরে ক্ষত বা ঘা হলে, খোস-
পাঁচড়া দেখা দিলে অর্জুনের
ছালের ক্বাথ দিয়ে ধুয়ে ছালের
মিহি গুঁড়া পানি দিয়ে মিশিয়ে লাগালে দ্রুত
ঘা সেরে যায়।
কানের ব্যথায়:
কানের ব্যথায় অর্জুন ব্যবহার
করা হয়। কচি পাতার রস কানের
ভিতরে দুই
ফোঁটা করে দিলে কানের
ব্যথা ভালো হয়।
যৌন রোগ:
যাদের মধ্যে যৌন অনীহা (Lack of
Libido) দেখা দেয় তাদের
ক্ষেত্রে অর্জুনের ছাল চূর্ণ
উপকারী। এই ছাল চূর্ণ দুধের
সাথে মিশিয়ে প্রতিদিন
নির্দিষ্ট সময়ে নিয়মিত খেলে এই
রোগ দূর হয়। এছাড়া যাদের শুক্রমেহ
(Spermatorrhoea) আছে তারা অর্জুন
ছালের গুঁড়া ৪-৫ গ্রাম ৪-৫
ঘণ্টা আধা পোয়া গরম
পানিতে ভিজিয়ে রেখে,
তারপর ছেঁকে ওই পানির সাথে ১
চামচ শ্বেতচন্দন
মিশিয়ে খেলে উপকার হয়।
এটা সুশ্রুত সংহিতার কথা।
রক্ত আমাশয়ে:
৪-৫ গ্রাম অর্জুন ছালের
ক্বাথে ছাগলের দুধ
মিশিয়ে খেলে রক্ত আমাশয়
ভালো হয়।
হজম ক্ষমতা বাড়ায়:
ডায়রিয়া বা পেটের অন্য
কোনো সমস্যা দেখা দিলে অর্জুনের
ছাল ৪৫-৩০ গ্রাম করে খেলে হজম
ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় ও অসুবিধা দূর হয়।
মুখ, জিহ্বা ও মাড়ির প্রদাহে :
অর্জুনের ছাল এসব রোগের
চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। এটি মাড়ির
রক্তপাতও বন্ধ করে। এছাড়াও অর্জুন
ছাল সংকোচক ও জ্বর নিবারক
হিসেবেও কাজ করে।
এছাড়াও এর রয়েছে অনেক
ঔষধিগুণ। ইদানিং অর্জুন গাছের
ছাল থেকে ‘অর্জুন চা’
তৈরি হচ্ছে যা হৃদরোগের জন্য
অত্যন্ত কার্যকরী। DOS
থেরাপি অনুযায়ী অর্জুন ফল
দেখতে মানব দেহের হৃদপিন্ডের
মতো তাই অর্জুনকে হৃদরোগের
মহৌষধ বলা হয়।
Home »
রোগ নিরাময়ে গাছের
উপকারিতা
» রোগ নিরাময়ে গাছের
উপকারিতা
রোগ নিরাময়ে গাছের উপকারিতা
Written By Unknown on শুক্রবার, ৬ মার্চ, ২০১৫ | ১:২২ AM
Related Articles
If you enjoyed this article just Click here Read Dhumketo ধূমকেতু, or subscribe to receive more great content just like it.
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন