Home » , » আজ ভয়াল ২৯ এপ্রিল প্রকাশিত: এপ্রিল ২৯, ২০১৫ | আপডেট: ৩:৫৫ পি এম

আজ ভয়াল ২৯ এপ্রিল প্রকাশিত: এপ্রিল ২৯, ২০১৫ | আপডেট: ৩:৫৫ পি এম

Written By Unknown on বুধবার, ২৯ এপ্রিল, ২০১৫ | ৪:১১ AM

আজ ভয়াল ২৯ এপ্রিল
প্রকাশিত: এপ্রিল ২৯, ২০১৫ | আপডেট:
৩:৫৫ পি এম
ভয়াল ২৯ এপ্রিল আজ। বাংলাদেশের
দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের জন্য এক দুঃসহ
স্মৃতি ও শোকাবহ দিন। ২৪ বছর আগে
১৯৯১ সালের এই দিনে বাংলাদেশের
উপকুলে আঘাত হানে স্মরণকালের
ভয়াবহতম প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় ও
জলোচ্ছ্বাস। যার আঘাতে মারা যায়
প্রায় ৫ লাখ মানুষ। যদিও সরকারি
হিসাবে এ সংখ্যা দেড় লাখের মতো।
ঘূর্ণিঝড়ের পর এক মাসের মধ্যে এর
প্রভাবে ডায়রিয়াসহ নানা রোগে
আক্রান্ত হয়ে মারা যায় আরো
লক্ষাধিক মানুষ।
সেদিনের সেই ভয়ঙ্কর তাণ্ডবে শুধু
মানুষই নয়, লক্ষ লক্ষ গবাদী পশু, ফসল, বিপুল
পরিমাণ স্থাপনা, সম্পদ ধ্বংস হয়।
আকস্মিক সেই ঘূর্ণিঝড়ে উপকূল পড়েছিল
লাশের মিছিল। চারিদিকে ছড়িয়ে-
ছিটিয়ে ছিল গিয়েছিল লাশ আর
লাশ। সেই সাথে ধ্বংসস্তুপে পরিণত
হয়েছিল বিস্তীর্ণ অঞ্চল। এই
ধ্বংসলীলা দেখে কেঁপে উঠেছিল
বিশ্ববিবেক। অনেকে চিরতরে
হারিয়েছে স্বজন, সহায়-সম্বল ও
আবাসস্থল। এখনো তারা সেই দুঃসহ
স্মৃতির কথা ভুলতে পারেনি।
কক্সবাজারের কুতুবদিয়া ও মহেশখালীই
প্রলংয়কারী ঘূর্ণিঝড়ে বেশী
ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। এই অপূরণীয় ক্ষতি
এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি
এখানকার অধিবাসীরা।
স্মরণকালের ভয়াবহতম ঘূর্ণিঝড় ও
সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাসের তাণ্ডবের হয়
দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্ব উপকুলীয়
অঞ্চল কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, মহেশখালী,
সন্দ্বীপ, ভোলা, ফেনী, নোয়াখালী,
পটুয়াখালী, বরিশালসহ ১৩টি জেলার
৭৪টি উপজেলার দেড় কোটি মানুষ।
ওইদিন রাতে পূর্ণিমার ভরা জোয়ার
থাকায় ঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের আঘাত
হয়ে উঠেছিল আরো সর্বগ্রাসী ও
প্রাণহানিকর।
ঘণ্টায় ২৩৫ কিলোমিটার বেগে প্রায়
৬ মিটার (২০ ফুট) উঁচু এ সাইক্লোনের
আঘাতে সে কালরাত্রিতে ছিনিয়ে
নেয় ৫ লাখ মানুষের জীবন। যাদের ৪
ভাগের ৩ ভাগই ছিল শিশু ও নারী।
এদেশের মানুষ ইতিপূর্বে ঝড় ও গৌর্কির
সঙ্গে কম-বেশি পরিচিত ছিল, কারণ
প্রতিবছরই এখানকার মানুষকে এ ধরনের
ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের সঙ্গে মোকাবেলা
করতে হয়। এবং প্রতি দুর্যোগেই জীবন
দিতে হয় অসংখ্য মানুষকে।
ইতিহাসের পাতা থেকে জানা যায়,
১৫৮৪ সালের পর ১৯৬১ সালে গৌর্কির
মরণ ছোবলে প্রায় ৬০ হাজারের অধিক
লোকের প্রাণহানি ঘটে পশ্চিমবঙ্গসহ
সমগ্র সুন্দরবন অঞ্চলে। এর পর এ অঞ্চলে
সাইক্লোন, হ্যারিকেন, জলোচ্ছ্বাস
ঘটে ১৭ বার। যার সর্বশেষ পুনরাবৃত্তি
ঘটে ২৯ এপ্রিল ১৯৯১-এর সোমবার
রাতে। এ গৌর্কির আঘাত ছিল
সর্বাধিক নির্মম। এ ধ্বংসলীলা ৭০-এর
প্রলয়ঙ্কারী গৌর্কির চেয়েও ছিল
বেশি শক্তিশালী ছিল। ফলে ক্ষতির
পরিমাণও ছিল সর্বাধিক। এ ধ্বংসযজ্ঞ
শুধু মানবশক্তির ক্ষয় করেনি বরং অচল,
নিথর, নিস্তব্ধ করে দিয়েছে সব জনপদ।
শিল্পবাণিজ্যসহ বিভিন্ন খাতে
ক্ষতির পরিমাণ ১০ হাজার কোটি
টাকা ছাড়িয়ে যায়।
এদিকে উপকূলজুড়ে ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ের ২৪
বছর অতিক্রান্ত হলেও এখনো সেই
উপকূলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা
যায়নি। বেড়িবাঁধ ও ঝুঁকিপূর্ণ
বেড়িবাঁধের মধ্যে চরম আতঙ্কে বাস
করছে সেখানকার মানুষ। এখনো প্রতি
বর্ষায় নির্ঘুম রাত কাটান তারা।
সেই জনসংখ্যার তুলনায় পর্যাপ্ত
ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়নি।
কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে
চট্টগ্রামের মিরসরাই পর্যন্ত ৩০০ কোটি
টাকা ব্যয়ে নির্মিত ২০০
কিলোমিটার বেড়িবাঁধ হয়নি
পরিকল্পনা অনুযায়ী। নেই রক্ষণাবেক্ষণ
ব্যবস্থা।
ফলে বিভিন্ন জায়গায় প্রতিবছর সৃষ্টি
হয় ভাঙন। আবার সংস্কারকাজে
অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে প্রতিবছর
সরকারি বরাদ্দের কোটি কোটি
টাকা লোপাট হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের হিসাব মতে, ২৯
এপ্রিলের জলোচ্ছ্বাসে কক্সবাজারের
৪৬০ কিলোমিটার বাঁধের মধ্যে ১৫৪
কিলোমিটার ভেঙে যায়। এরমধ্যে ৫৮
কিলোমিটার বাঁধের কোনো
অস্তিত্বই ছিল না। ২৫ বছর পরও এখন ৫০
কিলোমিটারের বেশি বেড়িবাঁধ
ভাঙা।
সূত্র জানায়, ৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়
পরবর্তীতে ৩৮টি দেশের বিভিন্ন
দাতাসংস্থা থেকে ৪ কোটি ৮০ লাখ
ডলার সাহায্য আসে। ওই টাকায়
আশ্রয়কেন্দ্র ও বেড়িবাঁধ নির্মাণের
উদ্যোগ নেওয়া হয়। বিদেশি অনুদানে ৩
হাজার ৬০০টি আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণের
কথা থাকলেও হয়েছে ১ হাজার ২০০-এর
মতো। এরমধ্যে শতাধিক কেন্দ্র সাগরে
তলিয়ে গেছে। চট্টগ্রাম প্রায় ৩৯১টি
নতুন আশ্রয়কেন্দ্র তৈরি করা হয়েছিল।
তার মধ্যে চট্টগ্রামের বাঁশখালীসহ
কয়েকটি উপজেলার উপকূলীয় এলাকায়
৬৩টির মতো কেন্দ্র তলিয়ে গেছে।
আনোয়ারার উপকূলীয় রায়পুর ও জুঁইদন্ডী
ইউনিয়নের বেড়িবাঁধের কিছু অংশ
এখনো ভাঙা। গত তিন বছর ধরে চরম
ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে ১৮টি
আশ্রয়কেন্দ্র। অরক্ষিত বাঁশখালীর ৩৭
কিলোমিটার বেড়িবাঁধ। ফলে
সামান্য জোয়ারে পানি ঢুকে পুরো
উপকূলীয় এলাকা সয়লাব হয়ে যায়।
রাজনৈতিক দলের নেতাদের
আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণের ওয়াদাও
বাস্তবায়ন হয়নি।
২৯ এপিল স্মরণে প্রতিবছর কক্সবাজারে
দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করা
হয়। এই বছরও সেসব কর্মসূচী পালন করা
হচ্ছে। কর্মসূচীর অন্যতম দাবি
উপকূলবাসীর নিরাপত্তা ব্যবস্থা
জোরদার করা।
এ ব্যাপারে কক্সবাজারের জেলা
প্রশাসক মো. আলী হোসাইন বলেন,
‘জেলার উপকূলবাসীর নিরাপত্তা
নিশ্চিত করণে বেড়িবাঁধ সংস্কার-
নির্মাণসহ নানা কাজ করা হচ্ছে। সেই
সাথে সেই ঘূর্ণিঝড়ের কারণে উদ্বাস্তু
হওয়া মানুষের বাসস্থানের ব্যবস্থা
করা হয়েছে।’ (সূত্র: বাংলামেইল)

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন