Home » » স্কুল যাবে বাড়ি বাড়ি

স্কুল যাবে বাড়ি বাড়ি

Written By Unknown on বুধবার, ১৭ জুন, ২০১৫ | ১০:৪৬ AM

স্কুল যাবে বাড়ি বাড়ি
প্রকাশিত: সন্ধ্যা ০৬:৫৭; বুধবার ; ১৭
জুন, ২০১৫ | সম্পাদিত: রাত
১১:৪২; বুধবার ; ১৭ জুন, ২০১৫
হিটলার এ. হালিম॥
শিক্ষার্থীরা স্কুলে গিয়ে
পড়াশোনা করবে। অাপাতদৃষ্টিতে
এটাই নিয়ম। এবার এই নিয়মের
ব্যতিক্রম হতে যাচ্ছে। ব্যতিক্রম
নিয়মে ছাত্র-ছাত্রীদের স্কুলে
যেতে হবে না। বরং স্কুলই ছাত্র-
ছাত্রীদের বাড়িতে বাড়িতে
অাসবে। তবে এই 'স্কুল' প্রচলিত
স্কুলগুলোর মতো হবে না। এই স্কুলে
কেবল তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে পড়ানো
এবং প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
সরকার ভাসমান জলযানে স্কুল
(আইসিটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র) তৈরির
উদ্যোগ নিয়েছে। প্রাথমিক
পর্যায়ে দেশের ৪টি অঞ্চলে এই
ভাসমান স্কুল তৈরির পরিকল্পনা
নেওয়া হচ্ছে। এই স্কুলগুলো সফল হলে
অাগামীতে পর্যায়ক্রমে তা
বাড়ানো হবে। দেশের হাওড়, চর ও
পানিবন্দী অঞ্চলে এই স্কুলগুলো
তৈরি করা হবে বলে সরকারের তথ্য
এবং যোগাযোগ প্রযুক্তি
(অাইসিটি) বিভাগ সূত্রে জানা
গেছে।
হাওড়, চর ও পানিবন্দী এলাকায়
স্কুলের সংখ্যা যেমন অপ্রতুল, তার
চেয়েও অপ্রতুল সেখানকার
শিক্ষার্থীদের তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে
জানাশোনা, পড়াশোনা এবং
প্রশিক্ষণের সুযোগ। দেশ
তথ্যপ্রযুক্তিতে অনেকদূর এগিয়ে
গেলেও এসব এলাকার শিক্ষার্থীরা
তথ্যপ্রযুক্তি ও সেবার ব্যবহার থেকে
দিন দিন অারও পিছিয়ে পড়ছিল।
হাওড়, চর ও পানিবন্দী এলাকায়
যোগাযোগ ব্যবস্থার অপ্রতুলতার
কারণে এসব এলাকার শিক্ষার্থীরা
দূরে কোথাও গিয়ে তথ্যপ্রযুক্তি
সম্পর্কে সম্যক ধারণাও নিতে পারে
না। ফলে এসব এলাকায় 'ডিজিটাল
বৈষম্য' দিন দিন প্রকট হয়ে উঠছে।
এই বৈষম্য কমাতে অাইসিটি বিভাগ
জলযানের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট
এলাকাগুলোর শিক্ষার্থীদের
তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে প্রশিক্ষণ এবং
তথ্যপ্রযুক্তি সেবাদানের উদ্যোগ
নিয়েছে। এই জলযানের স্কুলে
শিক্ষার্থীদের যেতে হবে না।
স্কুলগুলো রোজ শিক্ষার্থীদের
নিতে সংশ্লিষ্ট হাওড়, চর ও
পানিবন্দী এলাকার নির্দিষ্ট বাড়ি
বাড়ি (ঘাট) অাসবে। ছাত্র-
ছাত্রীরা ওই জলযানে (হতে পারে
তা লঞ্চ, বড় নৌকা) ‌‌‌চেপে বসবে। ওই
জলযানে থাকবে ইন্টারনেট ও
সোলার প্যানেল সুবিধাসহ ২০টি
করে ল্যাপটপ। শিক্ষার্থীরা
ল্যাপটপের মাধ্যমে হাতে-কলমে
তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে প্রশিক্ষণ পাবে।
ইন্টারনেটে লগ-ইন করে ঘুরে অাসতে
পারবে পুরো দুনিয়া। এসবই
পরিকল্পনার পর্যায়ে রয়েছে।
পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সময় এর
সঙ্গে অারও নতুন নতুন বিষয় যুক্ত হবে
বলে জানা গেছে। এ প্রকল্পের
ভাসমান অবকাঠামো (জলযান) তৈরি
করে দেবে নেদারল্যান্ডস অার
অাইসিট বিভাগ দেবে প্রশিক্ষণ
সুবিধা।
ভাসমান স্কুলে এভাবেই অামাদের
শিক্ষার্থীরা তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে
শিখবে এবং প্রশিক্ষণ নেবে
এ উপলক্ষে সরকারের কম্পিউটার
কাউন্সিল নেদারল্যান্ডসের সঙ্গে
(ফ্লোটিং সিটি অ্যাপস) একটি
সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করছে। ১৬
জুন রাজধানীর একটি হেটোলে এই
চুক্তি স্বাক্ষর হয়। সেখানে উপস্থিত
ছিলেন নেদারল্যান্ডসের
অবকাঠামো ও পরিবেশ বিষয়কমন্ত্রী
মিলানি শুল্টজ ভেন হাইগেন,
বাংলাদেশে নেদারল্যান্ডসের
রাষ্ট্রদূত গারবেন ডি জং, অাইসিটি
বিভাগের সচিব শ্যাম সুন্দর সিকদার,
বাংলাদেশ কম্পিউটার
কাউন্সিলের নির্বাহী পরিচালক এস
এম আশরাফুল ইসলাম, ফ্লোটিং সিটি
অ্যাপসের বোর্ড সদস্য ফ্রাঙ্ক বান
ব্যান আকের, ন্যাশনাল ডেটা
সেন্টারের প্রকল্প পরিচালক তারেক
বরকতউল্লাহ, তথ্য ও যোগাযোগ
প্রযুক্তি বিভাগের উপ-সচিব মিনা
মাসুদুজ্জামানসহ অারও অনেকে।
চুক্তি স্বাক্ষর উপলক্ষে অাইসিটি
বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ
অাহমেদ পলক বলেন, বিগত সাড়ে ৬
বছরে প্রায় ১০ হাজার মেগাওয়াট
বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যোগ হলেও
এখনও ৩০ শতাংশের বেশি মানুষের
কাছে বিদ্যুৎ পৌঁছেনি। বিস্তীর্ণ
চর ও হাওড়াঞ্চলে আধুনিক
তথ্যপ্রযুক্তি সেবা অপ্রতুল। তাই সেসব
প্রত্যন্ত এলাকায় ইন্টারনেট সুবিধা
এখনও অকল্পনীয়।
তিনি বলেন, ডিজিটাল
বাংলাদেশ বাস্তবায়ন করতে হলে
আমাদেরকে সমাজের সব স্তরের
মানুষের কাছে পৌঁছতে হবে।
ডিজিটাল বৈষম্য দূর করে সেইসব
এলাকার মানুষকেও তথ্যপ্রযুক্তির
সুবিধা দেওয়ার পাশাপাশি
তাদের সময়োপযোগী প্রশিক্ষণ
প্রদানের মাধ্যমে মানবসম্পদে পরিণত
করতে হবে। এই অপার সম্ভাবনা তৈরি
করতে হলে ভাসমান আইসিটি
প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ছাড়া আর কোনও
কার্যকর বিকল্প নেই।
বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট সুবিধাবিহীন
হাওড়, চরাঞ্চল ও পানিবন্দী মানুষকে
আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি প্রশিক্ষণ
প্রদানের জন্য ফ্লোটিং সিটি
অ্যাপস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে
মন্তব্য করে তিনি অারও বলেন,
নেদারল্যান্ডস বাংলাদেশের
বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্র। স্বাধীনতার পর
থেকে অত্যন্ত উদার দৃষ্টিভঙ্গি
নিয়ে নেদারল্যান্ডস আমাদের
বন্ধুত্বকে নিয়ে গেছে অনন্য উচ্চতায়।
তারই ফসল আজকের এই সমঝোতা
স্মারক।
বাংলাদেশের মতো
নেদারল্যান্ডসও নদীমার্তৃক দেশ।
সেদেশও দুর্গম ও সড়ক যোগাযোগ
বিচ্ছিন্ন এলাকায় ভাসমান জলযান
দিয়ে শিক্ষার্থীদের তথ্যপ্রযুক্তি
শিক্ষা দেওয়া হয়ে। অার এই শিক্ষা
দেওয়া হয় ফ্লোটিং সিটি
অ্যাপসের মাধ্যমে।
জানা গেছে, সিডর ও অাইলা
বিধ্বস্ত এলাকা হিসেবে খ্যাত
সাতক্ষীরা, মৌলভীবাজার,
হবিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জের হাওড়
এলাকা, হাতিয়া ও সন্দ্বীপের
মতো দ্বীপ বা চরাঞ্চল এলাকায়
এসব স্কুল গড়ে তোলা হতে পারে।
তবে এগুলো প্রস্তাবিত এলাকা।
জায়গা চূড়ান্ত হলেই শুরু হবে
ভাসমান নৌকা স্কুল।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন