Home » » স্বামীর জন্য হালিমার ভালোবাসা

স্বামীর জন্য হালিমার ভালোবাসা

Written By Unknown on বৃহস্পতিবার, ২ এপ্রিল, ২০১৫ | ১০:৫৭ PM


প্রথম পৃষ্ঠা
শেষ পৃষ্ঠা
আবহাওয়া
স্বামীর জন্য হালিমার
ভালোবাসা
শেরপুর প্রতিনিধি
« আগের সংবাদ পরের সংবাদ»
প্রতিদিন ভোরে উঠে স্বামীকে
নামাজ পড়ার জন্য অজু করান। সকালের
নাশতা খাওয়ানো, দুপুরে গোসল
করানো, কাপড় পরানো আর রাতে
তাকে পিঠে নিয়ে ঘুরে বেড়ানো,
সবই করেন তিনি হাসিমুখে। নয় বছর ধরে
ভালোবাসার মানুষটির জন্য এভাবেই
নীরবে কাজ করে চলেছেন হালিমা
বেগম (৫১)। তার বাড়ি শেরপুরের
নালিতাবাড়ীর দক্ষিণ রানীগাঁও
গ্রামে।
৩৬ বছর আগে আমজাদ আলীর (৫৯) সঙ্গে
বিয়ে হয় হালিমার। হালিমা অন্যের
বাড়িতে ও আমজাদ দিনমজুরি করতেন।
জমানো টাকায় তারা ৩০ শতক আবাদি
জমি কেনেন। পাঁচ বছরের মধ্যে তাদের
ঘর আলো করে আসে দুটি সন্তান। ২০০৫
সালে আমজাদের ডান পায়ের আঙুলে
ছোট্ট একটি ফোড়া ওঠে। চিকিৎসকের
পরামর্শে কেটে ফেলতে হয় আঙুলটি।
চিকিৎসক জানান, এটি বারজার রোগ।
এ রোগে এক বছরের মধ্যে পা কোমর
পর্যন্ত কাটতে হয়। তখন এক পায়ের ওপর ভর
করে কিছুটা চলতে-ফিরতে পারতেন।
চার বছরের ব্যবধানে একই রোগে বাম
পা কেটে ফেলতে হয়।
ওই দম্পতির বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, ৬
শতক জমির ওপর ছোট্ট টিনের ঘরে এ দুজন
বাস করেন। উঠানে রোদের মধ্যে বসে
স্বামী-স্ত্রী মিলে ছেঁড়া মশারি
সেলাইয়ের কাজ করছেন। হালিমা
খাতুন জানান, তার স্বামীর পায়ে
চারবার অস্ত্রোপচার করতে ৮০ হাজার
টাকা খরচ হয়েছে। শেষ সম্বল জমিটুকু
বন্ধক দিয়ে চিকিৎসা করিয়েছেন।
স্বামীর দুটি পা কেটে ফেলায়
সারাক্ষণ ঘরে থাকতে হতো। তাই
স্বামীকে একা রেখে অন্যের
বাড়িতে কাজ করা সম্ভব ছিল না।
২০০৯ সালে কাজের সন্ধানে তারা
ঢাকায় চলে যান। আমজাদ আলী
ভিক্ষাবৃত্তি আর তিনি গার্মেন্টসে
ঝাড়–দারের কাজ শুরু করেন। ২০১২
সালের জানুয়ারিতে হালিমার অসুখ
হলে তারা দুজনই গ্রামের বাড়ি ফিরে
আসেন। ঢাকা থেকে ফিরেই বন্ধক
দেয়া জমিটুকু ছাড়িয়ে নেন। বর্তমানে
ছেলে হাফিজুর ঢাকায় রিকশা
চালান। মেয়ে আঞ্জুয়ারা বেগমের
বিয়ে হয়েছে পাশের গ্রামে।
সন্তানরা সহযোগিতা করেন কি না,
জানতে চাইলে আমজাদ আলী
বলেন,‘তাদেরই ঠিকমতো সংসার চলে
না, আমাদের দিবে কিভাবে ? তবে
অসুখ-বিসুখের কথা শুনলে মেয়ে টা
ছুটে আসে।’ এই অসহায় জীবনে স্ত্রী
কখনো অবহেলা বা বিরক্তবোধ
করেছেন কি না, জানতে চাইলে ছলছল
নয়নে আমজাদ আলী বলেন, ‘ইচ্ছা করলে
হালিমা আমাকে ফেলে যেত পারত।
অসুস্থ অবস্থায় বিছানায় যখন পড়ে
থাকতাম, প্রচন্ড অস্থির লাগত। ঘুম আসত
না। লোকজনের আড়ালে রাতে
হালিমা আমাকে পিঠে নিয়ে
গ্রামের সড়কে সড়কে ঘুরত। হালিমা না
থাকলে বেঁচে থাকা কঠিন হতো।’
স্ত্রীর জন্য কিছু করার সুযোগ
পেয়েছিলেন কি না, জানতে চাইলে
তিনি বলেন, ‘আবাদি জমিটুকু
হালিমার নামে কিনছিলাম। আর
বাকি যা দেয়ার সবকিছু হালিমা
আমাকে দিয়েছে।’
আমজাদ আলীর সঙ্গে আলাপের সময়
হালিমা বেগম পাশে বসে বারবার
সুইয়ে সুতা লাগানোর চেষ্টা
করছিলেন। জানতে চাইলে বললেন,
‘কষ্টকে এখন কষ্ট মনে হয় না। বাকি
জীবনটা এই পঙ্গু মানুষটার সেবা করে
যেতে চাই।’ প্রতিবেশী হারুন-অর-রশিদ
জানান, একজন স্ত্রী তার স্বামীর
প্রতি কতটা ভালোবাসা, দায়িত্ব ও
কর্তব্যপরায়ণ হতে পারেন, হালিমাকে
না দেখলে বিশ্বাস করা যাবে না।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন