অস্ত্র চালানো, বোমা
তৈরিতে পারদর্শী
চট্টগ্রামের ভয়ংকর আট
নারী ডাকাত
ডেস্ক রিপোর্ট
« আগের সংবাদ
ডাকাতি, অস্ত্র চালানো, বোমা
তৈরিতে পারদর্শী চট্টগ্রামের
ভয়ংকর আট নারী ডাকাত। তারা হলেন
জুলেখা বেগম, খোরশেদা আক্তার,
হাসিনা বেগম, মঞ্জু আক্তার,
ফেরদৌস আরা, ছলিমা আক্তার,
সুমি আক্তার ও রহিমা আক্তার।
প্রত্যেকের বিরুদ্ধে রয়েছে
ডাকাতি, চাঁদাবাজি ও অস্ত্র
আইনে একাধিক মামলা।
জুলেখা বেগম (৩১) ও খোরশেদা
আক্তার (৩৫) হাসিনা বেগম (৩৪) ও
মঞ্জু আক্তার (৩৬)। চারজনই ভয়ংকর
ডাকাত। তারা অস্ত্র চালানো
এবং বোমা তৈরিতে পারদর্শী।
ডাকাত জুলেখা ও খোরশেদা
সম্পর্কে সতিন। তাদের স্বামী
ডাকাত মনির ওরফে কানা। সে ১৫
ডিসেম্বর ঢাকার খিলগাঁও থেকে
পাঁচভরি স্বর্ণসহ গ্রেফতার হয়।
তার বিরুদ্ধে বরগুনা, বেতাগী,
বরিশাল ও ঢাকার রমনা থানায়
ডাকাতির মামলা রয়েছে। একইভাবে
তার দুই স্ত্রীর বিরুদ্ধেও
একাধিক ডাকাতি মামলা রয়েছে।
মাদক ব্যবসার সঙ্গেও জড়িত
জুলেখা ও খোরশেদা। গত ১৩
ডিসেম্বর চট্টগ্রাম নগরীর আলকরণ
এলাকায় বোমা মেরে সোনার
দোকানে ডাকাতির ঘটনায় ডাকাত
মনিরের স্ত্রী জুলেখা বেগম (৩১)
ও খোরশেদা আক্তার গ্রেফতার হয়ে
বর্তমানে জেলহাজতে।
কোতোয়ালি থানার ওসি (তদন্ত)
নেজাম উদ্দিন বলেন, ‘জুলেখা ও
খোরশেদার স্বামী মনির এবং
হাসিনার স্বামী কালাম ১৩
ডিসেম্বর রাতে স্বর্ণের
দোকানে ডাকাতির সময়
বিস্ফোরিত বোমায় গুরুতর আহত হয়।
মনির ও কালাম তাদের স্ত্রীদের
বোমা বানানো ও বহনের কাজে
ব্যবহার করত। স্বামীরা ডাকাতি
করে আর স্ত্রীরা বোমা বানিয়ে
তা সরবরাহ করে। ওইদিন ডাকাতিতে
ব্যবহৃত বোমাও মনিরের স্ত্রী
বানিয়েছে বলে তদন্তে উঠে
এসেছে।’
জানা গেছে, জুলেখা ও খোরশেদা
দীর্ঘদিন ধরে ডাকাতিতে জড়িত।
মূলত তারা ডাকাতির সময় অস্ত্রবহন
ও অস্ত্র নিয়ে এলাকায় অবস্থান
নিত। পরিস্থিতি তাদের বিপরীতে
গেলে বোমা ফাটিয়ে এবং অন্ত্র
দিয়ে ফায়ার করে দলের সদস্যদের
পালিয়ে যেতে সহযোগিতা করতো।
তাদের গ্রুপে রয়েছে প্রায় ৪৫ জন
ডাকাত। তারা চট্টগ্রামের বাইরেও
ডাকাতিতে জড়িত। ওই গ্রুপের
অন্তত ১২ জন সম্প্রতি গ্রেফতার
হয়ে জেল হাজতে রয়েছে।
আরেক ভয়ংকর নারী ডাকাত হাসিনা
বেগম (৩৪)। তার বিরুদ্ধে নগরীর
কোতোয়ালী থানায় ডাকাতির
মামলা রয়েছে। ডাকাতি ছাড়াও সে
ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। নগর
পুলিশের কাছে দুর্ধর্ষ নারী
ডাকাত হিসেবে পরিচিত হাসিনা
গত বছরের শেষে দিকে গ্রেফতার হয়।
সে আদালতে একটি ডাকাতি মামলায়
স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি
দিয়েছে। এতে সে বোমা তৈরি এবং
ডাকাতদের অস্ত্র সরবরাহ করার কথা
উল্লেখ করে। তার স্বামী কালাম
ওরফে কালুও পুলিশের
তালিকাভুক্ত ডাকাত। তার
বিরুদ্ধে ২০০৬ সালে চট্টগ্রামের
পাহাড়তলীতে অগ্রণী ব্যাংকে
ডাকাতি, বরগুনা ও মানিকগঞ্জে
ডাকাতির মামলা রয়েছে।
চট্টগ্রামে সবচেয়ে ভয়ংকর নারী
ডাকাতের নাম মঞ্জু আক্তার (৩৬)।
হাটহাজারী, বোয়ালখালী ও নগরের
কোতোয়ালী থানায় তার নামে
রয়েছে একাধিক মামলা।
চট্টগ্রামের দুর্ধর্ষ খলিল
ডাকাতের সেকেন্ড ইন কমান্ড
হিসেবে কাজ করছে সে। খলিলের
বিরুদ্ধে রয়েছে ৯টি মামলা।
তারমধ্যে চারটি খুনের। ২০০৮
সালের ৪ মে হাটহাজারীর ফতেহপুর
এলাকায় প্রদীপ কুমারের ঘরে
ডাকাতির ঘটনায় মঞ্জু আক্তারকে
তিনটি বন্দুক ও বিপুল পরিমান
ডাকাতির স্বর্ণ ও টাকাসহ
গ্রেফতার করলে চট্টগ্রামে
চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। এরপর জেল
হাজত থেকে জামিনে বের হয়ে
পুনরায় জড়িয়ে পড়ে ডাকাতিতে।
সম্প্রতিকালে বেশ কয়েকটি
ডাকাতির ঘটনায় তার সম্পৃক্ততা
খুঁজে পায় পুলিশ। প্রায় ১১ বছর
ধরে ডাকাতিতে জড়িত রয়েছে
মঞ্জু আক্তার। সে পূর্ব গুমদন্ডি
দরফ পাড়ার মৃত হারুনুর রশীদের
স্ত্রী। স্বামী মরে যাওয়ার পর
সংসারের হাল ধরতে পুরুষ
ডাকাতের সাথে দস্যুতায় নেমে
পড়ে সে। আন্ত:জেলা ডাতকাত দলের
বিশাল একটি বাহিনীর নেতৃত্ব
দিয়ে যাচ্ছে মঞ্জু আক্তার।
অস্ত্র চালানো থেকে শুরু করে
অপরাধ জগতের সবকিছুতেই পারদর্শী
বোয়ালখালীর ডাকাত রহিমা
আক্তার (৪০)। তার বিরুদ্ধে
একাধিক মামলা রয়েছে
বোয়ালখালী থানায়। স্বামী
জাকির দুর্ধর্ষ ডাকাত। তার ছেলে
আকাশের বিরুদ্ধেও রয়েছে
একাধিক মামলা। ডাকাত রহিমা
বোয়ালখালী উপজেলার চরণদ্বীপ
ইউনিয়নের বাসিন্দা।
বোয়ালখালী থানার ওসি মো.
শামছুল ইসলাম নয়াদিগন্তকে বলেন,
রহিমা আন্ত:জেলা ডাকাত সর্দার
জাকিরের স্ত্রী। সে নিজেও
স্বামীর সঙ্গে ডাকাতিতে জড়িত।
তার বিরুদ্ধে বোয়ালখালী থানায়
একাধিক ডাকাতির মামলা আছে। গত
২৫ মে একটি ডাকাতির মামলায়
রহিমা আক্তার ও তার ছেলে আকাশ
(২০) গ্রেফতার হয়ে জেলহাজতে
রয়েছে। ডাকাত দলের পাশাপাশি
তার রয়েছে একটি বিশাল
সন্ত্রাসী বাহিনী।
রাইফেল ও ভারী অস্ত্র চালাতে
পারদর্শী ছলিমা আক্তার।
ডাকাতির পর রাইফেলের গুলি বর্ষণ
করে স্থান ত্যাগ করাসহ অস্ত্র
চালানোর অনেক অভিজ্ঞতা
রয়েছে তার। ২০ সদস্য সমৃদ্ধ ডাকাত
বাহিনীর নেতৃত্বে রয়েছে
ছলিমা। দুর্দান্ত প্রকৃতির
ছলিমা ডাকাতির আগে বাসাবাড়ি
ও দোকানপাট রেকি করে পরে
ডাকাতিতে অংশ নেয়। গত বছরের ১২
ডিসেম্বর নগরের চান্দগাঁও থানা
পুলিশের হাতে ধরা পড়ার পর
পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে,
সে ডাকাতদের অস্ত্র বহন করতো। সে
১৫ থেকে ২০টি সশস্ত্র ডাকাতিতে
অংশ নেয়। এছাড়া সে প্রশাসনের
চোখকে ফাঁকি দিয়ে অস্ত্রবহন ও
বেচা কেনা করত। নগরীর মোহরা
কুলাপাড়া এলাকার একটি বাড়ি
থেকে দুর্ধর্ষ নারী ডাকাত
ছলিমা আক্তারকে পুলিশ গত বছরের
১২ ডিসেম্বর রাতে গ্রেফতার করে।
এসময় তার কাছ থেকে একটি রাইফেল,
৬টি এক নলওয়ালা বন্দুক, ২৬ রাউন্ড
শট গানের গুলি, ৯ রাউন্ড
রাইফেলের গুলি, ৫টি টর্চ ও ৫টি
মোবাইল সেট উদ্ধার করে। ছলিমার
বাড়ি দক্ষিণ চট্টগ্রামের
বাঁশখালী উপজেলায়। পুলিশ
জানিয়েছে, সে দুর্ধর্ষ ডাকাত
জাফর আহমদের স্ত্রী। ছলিমার
স্বামী জাফরের বিরুদ্ধে
বোয়ালখালী, হাটহাজারী ও
বাঁশখালী থানায় ১১টি মামলা
রয়েছে। এরমধ্যে বোয়ালখালীর
একটি মামলায় যাবজ্জীবন সাজা
হয়েছে তার। তার স্ত্রী ছলিমাও
দীর্ঘদিন ধরে ডাকাতিতে সক্রিয়
রয়েছে। ছলিমার বিরুদ্ধে নগরের
চান্দগাঁও থানায় অস্ত্র ও
ডাকাতি আইনে দুটি মামলা
রয়েছে। সে অস্ত্র মামলায় এখন
কারাগারে রয়েছে।
ডাকাতদের অস্ত্র ভাড়া দেওয়া
এবং বিক্রি করে অল্প সময়ে বিপুল
টাকার মালিক হয়েছে সুমি। সুমি
আপা হিসেবে পরিচিত সুমি
আক্তার চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলায়
ভাড়াটে কিলার সরবরাহ,
ডাকাতিতে অস্ত্র সরবরাহসহ নানা
অপরাধে জড়িত। তার স্বামী
আজিজুল হক অস্ত্র ব্যবসা ও
ডাকাতিতে জড়িত। স্বামী-
স্ত্রী মিলে চট্টগ্রাম নগর,
জেলায় এবং দেশের বিভিন্ন
এলাকায় ডাকাতির পাশাপাশি ও
উঠতি সন্ত্রাসীদের অবৈধ অস্ত্র
ভাড়া দেয়। সুমির বিরুদ্ধে নগরের
বাকলিয়া থানায় একটি অস্ত্র
মামলা রয়েছে।
গত ১৮ ডিসেম্বর বাকলিয়া থানার
শাহ আমানত সেতু দিয়ে অস্ত্র
নিয়ে আসার সময় সুমি আক্তার ও
তার স্বামী আজিজুল হককে পুলিশ
গ্রেফতার করে। তাদের কাছে দু’টি
দেশি এলজি পাওয়া যায়। পরে তাদের
দেয়া তথ্যমতে সীতাকু- থেকে
অস্ত্রের ক্রেতা ইমরান হোসেন
মানিক এবং পটিয়া থেকে
ইয়াকুবকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
বাকলিয়া থানার ওসি মুহাম্মদ
মহসীন বলেন, আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর
নজর এড়াতে স্বামী আজিজ সুমিকে
দিয়ে অস্ত্র ব্যবসা করাতো। এর
আগেও বেশ কয়েকবার ডাকাতের
কাছে অস্ত্র পৌঁছে দিয়েছে
সুমি। অন্তত ২০টি ডাকাতিতে
সুমি সরাসরি জড়িত ছিল।
চট্টগ্রামের আরেক ভয়ংকর নারী
ডাকাত ফেরদৌস আরা (৩৫)। সে
দুর্ধর্ষ ডাকাত হানিফের স্ত্রী।
স্বামীর হাত ধরে ডাকাতিতে আসা
ফেরদৌস বিদেশী পিস্তল নিয়ে
ডাকাতিতে নামে। চট্টগ্রামের
আন্ডারওয়ার্ল্ডে পিস্তল
ফেরদৌস নামে সে পরিচিত।
ফেরদৌসের বিরুদ্ধে অস্ত্র,
ডাকাতি ও খুনের ঘটনায় চারটি
মামলা রয়েছে। ডাকাতির পর ফাঁকা
গুলি করে উল্লাস করতো সে।
গত বছরের ১৪ অক্টোবর বোয়লখালী
উপজেলার কধুরখিল গ্রামে অভিযান
চালিয়ে ফেরদৌস আরাকে
গ্রেফতার করে পুলিশ। এসময় পুলিশ
তার কাছ থেকে দু’টি দেশি বন্দুক
ও ২০ রাউন্ড গুলি, একটি বিদেশি
পিস্তল ও ১২ রাউন্ড গুলি এবং
একটি বন্দুকের বাট উদ্ধার করে।
২০১৪ সালের ২১ সেপ্টেম্বর
বোয়ালখালী উপজেলার চরণদ্বীপ
গ্রামে একটি বাড়িতে ডাকাতের
গুলিতে এক শিশুর মৃত্যু হয়। এ
ঘটনার সঙ্গে ফেরদৌস আরা ও তার
স্বামী হানিফ জড়িত ছিল বলে
গ্রেফতারের পর আদালতে ফেরদৌস
স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি
দেয়। এতে সে বলে, বোয়ালখালীর
চরনদ্বীপ এলাকায় ২১ সেপ্টেম্বর
ডাকাতি হয়। ওইদিন সন্ধ্যায় সে
সিএনজি অটোরিকশা করে বাড়ির
পাশে অস্ত্র রেখে আসে। রাতে
সে ও তার স্বামীর ডাকাতদল
ডাকাতিতে অংশ নেয়। পুলিশ
জানায়, ফেরদৌস বেগমের স্বামী
হানিফের বিরুদ্ধে ১৪টি মামলা
রয়েছে। তার ভাশুর জাফরও দুর্ধর্ষ
ডাকাত হিসেবে পরিচিত। ফেরদৌস
ডাকাতির পাশাপাশি অস্ত্র
বেচাকেনায় জড়িত। আন্ত:জেলা
ডাকাত দলের সদস্যসহ তার দলে
রয়েছে প্রায় ৩০ জন ডাকাত।
Home »
অস্ত্র চালানো
,
বোমা
তৈরিতে পারদর্শী
চট্টগ্রামের ভয়ংকর আট
নারী ডাকাত
» অস্ত্র চালানো, বোমা
তৈরিতে পারদর্শী
চট্টগ্রামের ভয়ংকর আট
নারী ডাকাত
অস্ত্র চালানো, বোমা তৈরিতে পারদর্শী চট্টগ্রামের ভয়ংকর আট নারী ডাকাত
Written By Unknown on মঙ্গলবার, ৯ জুন, ২০১৫ | ৯:৫০ PM
Related Articles
If you enjoyed this article just Click here Read Dhumketo ধূমকেতু, or subscribe to receive more great content just like it.
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন