‘সাধুবাবা’র ফেসবুকেই
ফাঁস এক যুগের প্রতারণা
কলকাতা: এ পর্যন্ত ঠিকঠাকই চলছিল।
বাদ সাধল ফেসবুক। শেষে চ্যাট করতে
গিয়েই ধরা পড়ে গেল ছদ্মবেশী
প্রতারক। মুখোশ খুলে গেল
‘সাধুবাবা’র। বারো বছর আগে
কলকাতার গ্রাহকদের থেকে প্রায়
আড়াই কোটি টাকা হাতিয়ে চম্পট
দিয়েছিল ডাকঘর-এজেন্ট দুর্যোধন
মিশ্র। সাধুবাবার ভেক ধরে ডেরা
বেঁধেছিল উত্তরাখণ্ডের বদ্রীনাথে।
নাম ভাঁড়িয়ে ফেসবুকে অ্যাকাউন্টও
খুলেছিল, যার দৌলতে তার আসল
পরিচয় ফাঁস হয়ে যায় সিবিআই
গোয়েন্দার কাছে। শুক্রবার
বদ্রীনাথের পাহাড়েই দুর্যোধন
গ্রেপ্তার হয়েছে। এ দিনই আদালতে
তোলার উদ্দেশ্যে স্থানীয় পুলিশের
সাহায্যে তাকে হেলিকপ্টারে
উড়িয়ে আনা হয়েছিল যোশীমঠে।
কিন্তু সেখান থেকে সড়কপথে
গোপেশ্বর পৌঁছতে সন্ধ্যা হয়ে
যাওয়ায় শনিবার সকালে আদালতে
তোলার সিদ্ধান্ত হয়। শনিবার
গোপেশ্বর আদালতে তাকে হাজির
করে ট্রানজিট রিমান্ড চাওয়া হবে।
নিয়ে আসা হবে কলকাতায়।
সিবিআই সূত্রের খবর, আদতে
বিহারের মধুবনির বাসিন্দা দুর্যোধন
কলকাতার ধাপায় থাকত। ট্যাংরার
গোবিন্দ খটিক রোড পোস্ট অফিসে
এজেন্টের কাজ করত। সিবিআইয়ের
দাবি, ১৯৯৮ থেকে সে গ্রাহকদের
ঠকাতে শুরু করে, সঙ্গে হাত মেলায়
পোস্টমাস্টার। পোস্টমাস্টারের সই
করা সার্টিফিকেট দিয়ে গ্রাহকদের
থেকে টাকা নিয়ে তারা ভাগ-
বাঁটোয়ারা করে নিচ্ছিল। দুর্যোধন
এভাবে ২ কোটি ৬০ লক্ষ টাকা
তোলে, যার এক পয়সাও ডাকঘরের
খাতায় জমা পড়েনি। ২০০৩-এ
সংশ্লিষ্ট গ্রাহকরা সার্টিফিকেট
ভাঙাতে এসে বোঝেন, তাদের
বেমালুম ঠকানো হয়েছে। বৌ-
ছেলে-মেয়ে সমেত দুর্যোধন ততক্ষণে
উধাও। ডাকঘর-কর্তৃপক্ষের অভিযোগের
ভিত্তিতে সিবিআই তদন্তে নামে।
তাকে ধরার জন্য খবরের কাগজে
বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়, ইনাম ঘোষণা
হয়। কিছুতেই লাভ হয়নি। তবে
সিবিআই-অফিসার ধর্মরাজ লামা
হাল ছাড়েননি। বারো বছর ধরে
তিনি এই ‘কেসের’ পিছনে লেগে
ছিলেন। সম্ভাব্য সমস্ত জায়গায় খোঁজ
করেছেন ও ব্যর্থ হয়েছেন। কিন্তু
শিকে ছিঁড়েছে গত মার্চে। আর
তারই সূত্র ধরে পাওয়া গিয়েছে
ফেরারির সন্ধান। কী ভাবে? লামা
আচমকা জানতে পারেন, দুর্যোধনের
মেয়ে রয়েছেন রাজস্থানের
বিকানেরে। ফেসবুক প্রোফাইল
ঘেঁটে পাওয়া যায় দুর্যোধনের স্ত্রী
ও দুই ছেলের খোঁজও। দেখা যায়,
তারা রয়েছেন রাজস্থানের
যোধপুরে। লামা যোধপুর গিয়ে
স্থানীয় পুলিশের সাহায্যে
দুর্যোধনের স্ত্রীর মোবাইল নম্বর
জোগাড় করেন। কল লিস্ট ঘেঁটে
দেখা যায়, প্রতি রাতে ঘুরে-ফিরে
দুটি মোবাইল নম্বর থেকে ওতে ফোন
আসে। এক ঘণ্টা করে কথা হয়। খোঁজ-খবর
করে জানা যায়, নম্বর দুটি রয়েছে দুই
মহিলার নামে। দুই মহিলা? এখানেই
তদন্ত হোঁচট খায়। যদিও লামা দমে
যাননি। যোধপুরের স্থানীয় সূত্রে
তিনি খবর পান, দুর্যোধনের স্ত্রী ও দুই
ছেলে ২০০৬ সাল থেকে ওখানে
থাকলেও দুর্যোধনকে কেউ দেখেনি।
এবার দুর্যোধনের ছেলের ফেসবুক
প্রোফাইলে ঢুকে অনুসন্ধান শুরু হয়।
লামা খেয়াল করেন, তার ‘ফ্রেন্ড
লিস্টে’ রয়েছেন এক সাধুবাবাও।
এবং ‘দুর্গেশ মহারাজ’ নামে সেই
সাধুবাবার ফেসবুক প্রোফাইলে
যেতেই খুলে যায় রহস্যের দ্বার।
দেখা যায়, মহারাজের ফেসবুক
অ্যাকাউন্টে যুক্ত রয়েছে সেই
মোবাইল নম্বর দুটি। জানা যায়,
সেগুলি থেকে দুর্যোধনের ছেলের
মোবাইলেও নিয়মিত ফোন আসে।
কালবিলম্ব না-করে লামা বদ্রীনাথ
পাড়ি দেন। অন্য দিকে দুর্গেশ
মহারাজের ফেসবুক প্রোফাইলের
ছবির সঙ্গে দুর্যোধনের পুরনো ছবি
মেলানোর চেষ্টা করতে থাকে
সিবিআই। তবু একশো ভাগ নিশ্চিত
হওয়া যায়নি। ইতিমধ্যে বদ্রীনাথে
গিয়ে প্রধান মন্দিরের কাছে এক
আশ্রমে দুর্গেশ মহারাজের খোঁজ পান
লামা ও তার সঙ্গীরা। মহারাজের
সাদা দাড়ি, সাদা চুল। পরনে
গেরুয়া। তিন সিবিআই অফিসার অন্য
পরিচয়ে আশ্রমের অতিথি হয়ে
থাকতে শুরু করেন। মহারাজের সঙ্গে
কথাও চালাতে থাকেন।
বাক্যালাপের ফাঁকে তারা অবশ্য
মহারাজের গলার আওয়াজ রেকর্ড
করে হোয়্যাটসঅ্যাপে কলকাতায়
পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। তাতেই সব
সংশয় ঘুচে যায়। দুর্যোধনকে চিনতেন
যারা, মহারাজের গলা শুনে তারা
নিশ্চিত হয়ে বলেন, ইনিই তিনি!
অবশেষে এ দিন সকালে দুর্গেশকে
আশ্রমের একশো মিটার দূরে নিয়ে
গিয়ে গ্রেপ্তার করা হয় তাকে।
ভেকধারী মহারাজ কৃতকর্মের কথা
স্বীকারও করে নিয়েছেন বলে
সিবিআই সূত্রের দাবি।
Home »
‘সাধুবাবা’র ফেসবুকেই
ফাঁস এক যুগের প্রতারণা
কলকাতা:
» ‘সাধুবাবা’র ফেসবুকেই
ফাঁস এক যুগের প্রতারণা
কলকাতা:
‘সাধুবাবা’র ফেসবুকেই ফাঁস এক যুগের প্রতারণা কলকাতা:
Written By Unknown on শুক্রবার, ৩ জুলাই, ২০১৫ | ১১:৪৯ PM
Related Articles
If you enjoyed this article just Click here Read Dhumketo ধূমকেতু, or subscribe to receive more great content just like it.
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন